29, April, 2024
Home » দুদক নাড়াচ্ছেন শিবলী

দুদক নাড়াচ্ছেন শিবলী

567 views

– আবদুর রব ভুট্টো
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মাফিয়া ডন হালের মহাপরিচালক (বিশেষ অনুসন্ধান-তদন্ত) মীর মো: জয়নুল আবেদীন শিবলী। কয়েক মাস আগে সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রী সরাসরি বলেছেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, মুনাফা লুণ্ঠন, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে। তার বক্তব্য খুবই যথার্থ। তার সূত্র ধরে বলা চলে, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রিত। দুর্নীতি দমন কমিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিশেষায়িত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটিও বিশাল এক সিন্ডিকেটের হাতে বন্দী। পুরো প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে রয়েছে কয়েকজন কর্মকর্তার সিন্ডিকেট। প্রতিষ্ঠানের ভেতরই তারা ঘাপটি মেরে আছেন দুদকের বহু অর্জনকে নস্যাৎ করার লক্ষ্যে। অভ্যন্তরীণ এসব সিন্ডিকেটের ভেতরেও রয়েছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সিন্ডিকেট। যতদিন এসব সিন্ডিকেট ভাঙা না যাবে-ততোদিন দুদক কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে না। বিশ্লেষকরা মনে করেন, সরকারের পদলেহী দুদক চেয়ারম্যান এবং কমিশনারগণ যতই সততা আর নিষ্ঠার বুলি কপচান না কেন, সিন্ডিকেট মুক্ত করা না গেলে তাদের সমুদয় প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হতে বাধ্য। কারণ তারা নিজেরাই সিন্ডিকেট তৈরি করেন। সিন্ডিকেটের কারসাজি উপভোগ করেন। এর ফলে সাধারণ মানুষের কাছে দুদকের ভাবমূর্তি এখন তলানিতে। অচিরেই বহির্বিশ্বের কাছেও দুদক একটি ‘অকার্যকর প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে মর্মে বিশ্লেষকদের আশঙ্কা। প্রতিষ্ঠানটিকে স্বমহিমায় টিকিয়ে রাখার স্বার্থে ইমেজ পুরুদ্ধারের শুদ্ধি অভিযান শুরু করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।

২০০৬ সালের শেষ দিক। বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারের অবস্থা টালমাটাল। বড় বড় দুর্নীতির অভিযোগ আসতে থাকে সরকারদলীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে। অথচ এসব দুর্নীতিবিরুদ্ধে দুদক কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতেই পারছে না। দুদক কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ‘কর্মহীন অবস্থা’য় নিলম্বিত করা হয়। এর মধ্যে আইনে অজ্ঞ দুদকের কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিজেরাই নিজেদের ‘ব্যুরো’ থেকে ‘কমিশন’এ বহাল করে নেন। এ বিষয়ে কোনো বিধি-বিধান ও প্রক্রিয়াই অনুসরণ করা হয়নি। এ বিষয়টি উচ্চ আদালত অবধি গড়ায়। হাইকোর্ট সুপ্রিমকোর্ট হতে যাচাই-বাছাই সম্পর্কে রায় আসার আগে-পরে রাজনৈতিক কারণে দুদক টালমাটাল দশায় পতিত হয়। চলে আসে ওয়ান ইলেভেন। যাচাই-বাছাই সম্পর্কে গড়ে ওঠা জন্মজখম নিয়েই শেষ ‘ওয়ান ইলেভেন’ পর্ব। আসে রাজনৈতিক সরকার। যাচাই-বাছাইয়ের জন্ম জখমে কমিশনের নিজস্ব কর্মচারীদের বিভক্তির সাথে যুক্ত হয় নানাভাবে বিভাজিত একাধিক সিন্ডিকেট। এ বিভক্তির সুযোগ নেন কমিশনের তৎকালিন শীর্ষ কর্মকর্তারাও। জন্মনিরোধক সামগ্রির মতন দুদকের কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে যথেচ্ছ ব্যবহার করা শুরু হয়। সেই যে শুরু-এখন চলছে তাদের ব্যবহারের পোয়াবারো। শীর্ষ কর্তকর্তাদের ফুটফরমায়েশ খাটার বদৌলতে ‘ উপঢৌকন’ হিসেবে অধস্তনদেরকে দেয়া পদোন্নতি। কোনো মানদন্ড নেই। নেই সিনিয়রিটি। বিধি-বিধান সব থাকতেও এখানে সৃজনশীল পদ্ধতির প্রয়োগ হতে থাকে পদোন্নতি, নিয়োগ, শাস্তি, বদলি, পদায়ন ও নিয়ন্ত্রণে। ইচ্ছেমতো চলে ‘পিক অ্যান্ড চ্যুজ’ মেথড। পদোন্নতিতে শুরু হয় ঘুষের লেনদেন। যারা অপরাধের শিকার তারা বিষয়টিকে মেনে নিয়তি হিসেবে। কমিশনের অপরাধে শিকার কোন কর্মকর্তা কর্মচারি মুখ খুলতে চায় না। এরা চাকরি হারানোর চিন্তায় সদা ভয়ার্ত। কেননা বলিরপাঁঠা খন্দকার এনামুল বাছির এবং শরীফউদ্দীন এর সর্বশেষ প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এ বাস্তবতার কারণে দুদকের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির প্রমাণ্য প্রতিবেদন সংবাদ মাধ্যমেও কখনোই প্রকাশিত হয়নি।

দুদকের তেমন কার্যক্রম নেই কেন :
সবার মনেই একটি প্রশ্ন-দুর্নীতি দমন কমিশন এখন থমকে আছে কেন ? সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান এই প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েছিলেন ‘নখদন্তহীন বাঘ’। সেই দুর্নাম এখনও ঘুচাতে পারেনি কমিশন। কারণ সব ধরণের অনুসন্ধানই কমিয়ে দিয়েছে বর্তমান কমিশন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক বিশেষ কোনো এজেন্ডাভিত্তিক অভিযোগ এলে দুদক এটি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তলব, নোটিশ, জিজ্ঞাসাবাদ,অভিযান ইত্যাদি পর্যায়ে দুদক শুধু মিডিয়া কাভারেজ নেয়। দেশবাসীর কাছে আদায় করে কথিত ‘সাফল্য’র মাইলেজ। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, দেশের এমন কোনো সরকারি দপ্তর, রেগুলেটরি বডি, স্বায়ত্ত্বশাসিত, অর্ধস্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান নেই যেখানে আর্থিক বিষয়ে সংগঠিত অপরাধ নিয়ে আসা অভিযোগ নিয়ে কাজ করেনি। এজন্য দুদককে একটা বিশেষায়িত তদন্ত সংস্থা বলা হয়। একটা বিশেষায়িত তদন্ত সংস্থাকে খুব কৌশলে অকার্যকর করে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চলমান আর্থিক দুনীতি নিয়ে দুদক তেমন কোন অনুসন্ধান ও তদন্ত করছে না। মাঝেমধ্যে দু’একটা কাজ করলেও তা আলোর মুখ দেখে না।

দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যেতে পারে : বিআইডব্লিউটিএ’র ঘাট ইজারা দুর্নীতি নিয়ে অনুসন্ধান করে গণপূর্ত বিভাগ থেকে প্রেষণে আসা উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আলীয়াজ হোসেন ওই সংস্থার চেয়ারম্যান এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে সুপারিশ করে রিপোর্ট দিলে তা অনুমোদন হয়। অনুমোদনের তথ্য মিডিয়াতে প্রচার হলে নৌবাহিনী হতে প্রেষণে আসা চেয়ারম্যান এর অদৃশ্য ইশারায় অদ্যাবধি মামলা হয়নি। এর ফলে অনুসন্ধান কর্মকর্তা পদোন্নতির পুরস্কার পেয়েছেন বটে। কিন্তু দেশবাসীর কাছে দুদক সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। যদিও এ ধরণের ‘পুরষ্কৃত’ হওয়ার ঘটনা দুদকে নতুন নয়। এখানে কি থেকে কী হয় সাদা চোখে বোঝা মুশকিল। সব কিছুই চলে অদৃশ্য ইশারায়। এমন ঘটনার দু-চারটি নজির দেয়া যাক। ফরিদপুরের এসপি সুভাষ, পিরোজপুরের সাবেক এমপি একেএম আব্দুল আউয়াল,তার ভাই আব্দুল মালেকের দুর্নীতি মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে বদল করা হয়েছে অদৃশ্য কারণে। বহুল আলোচিত খাদ্য অধিদপ্তরের নিয়োগ দুনীতির চার্জশীট দেয়া হয় বটে। কিন্তু মামলার তদন্তকালে দুদক কর্মকর্তাদের ঘুষ লেনদেনের যে অডিও রেকর্ডের দালিলিক প্রমাণ গোপন কিংবা গায়েব করে দেয়া হয়েছে। মামলার গুরুত্বপূর্ণ এই আলামতটি রীতিমতো গুম করা হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ‘এসপি লীগ’র সভাপতি পুলিশ কর্মকর্তা সৈয়দ নূরুল ইসলাম এর অবৈধ সম্পদ নথিভুক্ত করে দেয়া হয়েছে। দায়মুক্তি প্রদানের পর পর তাকে পদোন্নতি ও ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। র‌্যাব এর কেনাকাটা নিয়ে ওর মহাপরিচালক বেনজির এর বিষয়ে উপ-পরিচালক সৈয়দ তাহসিনুল হক অনুসন্ধান করেছেন। পরবর্তীতে তাকে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। দুদকের বিগত চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বেশ কিছু ভালো উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু খন্দকার এনামুল বাছিরের ঘটনার পর থেকে তিনি বিতর্কিত হয়ে যান। ওই মামলার তদন্তকালে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিচালক ইকবালের নামে আসে। কিন্তু তাকে কোনো জিজ্ঞাসাবাদ না করেই দাখিল করা হয় তদন্ত প্রতিবেদন। সেই ইকবাল এখন দুদকের মহাপরিচালক।

কোন দিকে খেলছেন শিবলী?
বলা হয়, দুদক নামের প্রতিষ্ঠানটিকে পরিচালনা করেন একজন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের কমিশন। কিন্তু এই কমিশনকে এখন পরিচালনা করছেন মহাপরিচালক মীর মো: জয়নুল আবেদীন শিবলী। এটি তার ক্যরিয়ারের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর পদবি। চাকরির পুরোটা জীবন তিনি মহাপরিচালক ( বিশেষ অনুসন্ধান-তদন্ত) হওয়ার স্বপ্নে ছিলেন বিভোর। অসম্ভব কষ্টসহিষ্ণু, সহ্য ক্ষমতাসম্পন্ন মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী অত্যন্ত ধূর্ত, চতুর, অসম্ভব স্মরণশক্তি সম্পন্ন আপাত: ভদ্র একজন মানুষ। ব্যবহার-বিনয়ের আতিশয্যের মুখোশে এই কর্মকর্তা মূলত: এক দুর্ধর্ষ ঠান্ডামাথার দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা। কর্মকর্তা বললেও যথাযথ হবে না। তিনি মূলত: দুর্নীতির মাফিয়া ডন। দেশের বড় বড় দুর্নীতিবাজদের তিনি ত্রাণকর্তা। যখন যে কমিশন আসে তখন সেই কমিশনের হয়ে যান । মাদরাসায় পড়–য়া মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী একটি বিতর্কিত রাজনৈতিক মতাদর্শের কর্মকর্তা হয়েও দুদকের সব চেয়ারম্যান, সকল কমিশনারের কাছে তিনি হয়ে যান ‘নির্ভরতার প্রতীক’। বিনিময়ে পুরষ্কারও তিনি বাগিয়ে নিয়েছেন। অবলম্বনহীন পুঁইয়ের ডগার মতো তরতর করে তিনি উঠে গেছেন শীর্ষে। উপ-পরিচালক,পরিচালকের মই টপকে তিনি এখন মহাপরিচালক। নিজের মহাপরিচালক হওয়ার পথে যারাই সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়াতে পারেন সেই কর্মকর্তাদের তিনি অত্যন্ত কৌশলে কমিশনকে ব্যবহার করে শায়েস্তা করেন।

দুদকে এ ঘটনা সর্বজন বিদিত যে, ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর কমিশনের ০৭/২০১৩ নম্বর কমিশন সভার অনুমোদন ক্রমে কমিশনে কর্মরত ৭৪ জন উপ-পরিচালকের জ্যেষ্ঠতার তালিকা প্রণয়ন করা হয়। তালিকার ১ নম্বরে ছিলেন অবসরে চলে যাওয়া উপ-পরিচালক ঢালী আব্দুস সামাদ। ৭৪ নম্বরে ছিলেন উপ-পরিচালক বেগম সেলিনা আখতার। সিনিয়রিটির ওই তালিকায় ১৮ নম্বরে মো: আক্তার হোসেন, ৩১ নম্বরে ছিলেন উপ-পরিচালক মীর মো: জয়নুল আবেদীন শিবলী। ৩০ নম্বরে ছিলেন মো: বেনজীর আহম্মদ। ৪০ নম্বরে সৈয়দ ইকবাল হোসেন। এদের মধ্য থেকে আমলা-বন্দনা করে পরিচালক পদে আসীন হন এই তিন কর্মকর্তা। একই পদ্ধতি অনুসরণ করে এখান থেকে মহাপরিচালক পদ বাগিয়ে নেন মো: আক্তার হোসেন, মীর মোহাম্মদ শিবলী এবং সৈয়দ ইকবাল হোসেন। এই কর্মকতারা কখনেই সংস্থাটিতে নানাভাবে নিষ্পেষিত, নিপীড়িত কর্মকর্তা-কর্মকর্তাদের কথা ভাবেননি। এমনকি সর্বশেষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াকু যোদ্ধা চট্টগ্রামের উপ-সহকারি পরিচালক মো: শরীফউদ্দীনকে যখন সরকারি চাকরিবিধির একটি কালো ধারা ব্যবহার করে পত্রপাঠ চাকরিচ্যুত করা হয়-তখন জয়নুল আবেদীন শিবলী সিন্ডিকেট শুধু চুপই ছিলেন না, শরীফের চাকরিচ্যুতি ত্বরান্বিত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। কারণ, শরীফ তার শ্বশুর সম্পর্কের আত্মীয় পেট্টোবাংলার পরিচালক (পরিকল্পনা) আইয়ুন খান চৌধুরীর জালজালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ এবং সীমাহীন দুর্নীতির বিষয়ে মামলা রুজুর সুপারিশ করেছিলেন। ফলে শরীফ এবং পূর্বাপর এনামুল বাছির,পরিচালক ফজলুল হকসহ কমিশনের রোষানলে পড়া কর্মকর্তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কমিশনে একটি টু শব্দও করেননি। ব্যস্ত থেকেছেন নিজেদের আখের গোছাতে। এর ফলশ্রুতিতে প্রায় সব কমিশন আমলেই তারা ঢাকায় পোস্টিং পেয়েছেন। প্রধান কার্যালয়ে আমলা নির্ভর কমিশনের কাছাকাছি থেকে তাদের কু-পরামর্শ দিয়েছেন। কমিশনের বড় বড় দুর্নীতির বিষয়ে তারা কমিশনের ফরমায়েশ প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।

খন্দকার এনামুল বাছির ডিজি হতে চেয়েছিলেন। তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তার পরে সম্ভাব্য প্রার্থী ছিলেন পরিচালক নাসিম আনোয়ার। তার সম্পর্কে মিথ্যা ও নেতিবাচক তথ্য দিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের কান ভারী করে পদোন্নতি বঞ্চিত করেন শিবলী। একইভাবে উপ-পরিচালক থেকে পরিচালক পদে পদোন্নতি বাগাতে মো: বদিউজ্জামান কমিশনকে অত্যন্ত চাতুর্যের সঙ্গে বিভ্রান্ত করেন। তার চেয়ে যোগ্য ও সিনিয়র কর্মকর্তাদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা ওই কমিশনের কানে দিতেন। অভিজ্ঞ ও দক্ষ কর্মকর্তারা যাতে ঢাকায় পোস্টিং না পান সেই কলকাঠি নাড়েন তিনি। দুদকের এমন কোনো কর্মকর্তা নেই যারা প্রধান কার্যালয়ের বাইরে বিভাগীয় শহর এবং সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে পোস্টিং পাননি। ব্যতিক্রম কেবল জয়নুল আবেদীন শিবলী। ইকবাল মাহমুদ দায়িত্বে আসার পর কিছু দিন তাকে টাঙ্গাইল জেলা কার্যালয়ে পোস্টিং দিয়ে রাখা হয়েছিলো। অন্যথায় চাকরির পর পুরো সময় জুড়ে শিবলী প্রধান কার্যালয়েই কর্মরত ছিলেন। যার পুরো সুবিধাটি তিনি কাজে লাগিয়ে যখন যে কমিশন বসেছে তাকেই বশীভূত করার অদ্ভুত ক্ষমতা তিনি রপ্ত করেন। যোগ্য কর্মকর্তাদের অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ পদে, কখনওবা ঢাকার বাইরে সরিয়ে রেখে প্রধান কার্যালয়ে বসে তিনি স্বীয় অপরিহার্যতা প্রমাণের সুযোগ নেন। ফলে একের পর এক কমিশন বদল হলেও বদলায় না দুদকে মীর জয়নুল আবেদন শিবলীর চেয়ার। অক্ষত থাকে তার প্রভাব-প্রতিপত্তি ও একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ। চাকরি জীবনে টাঙ্গাইলের একটি পোস্টিং ছাড়া কোনোদিনই ঢাকার বাইরে বদলি হতে হয়নি তাকে। একই অফিসে চাকরির প্রায় পুরোটা সময় কাটিয়ে দেয়ায় কিছু কর্মকর্তার মাঝে সৃষ্টি করেছেন ব্যাপক প্রভাব।

ব্যুরোর আমলে জেনারেল মতিন, কমিশন হওয়ার পর বিচারপতি সুলতান হোসেন খান, হাসান মশহুদ চৌধুরী, গোলাম রহমান, বদিউজ্জামান, ইকবাল মাহমুদ থেকে শুরু করে বর্তমান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ পর্যন্ত সেই প্রভাব অক্ষুন্ন। ইকবাল মাহমুদ দায়িত্বে থাকাকালে তার অনেক ফরমায়েশী অনুসন্ধান-তদন্ত প্রতিবেদন শিবলী করে দিয়েছেন। এ প্রক্রিয়ায় তিনি চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের নির্দেশে পরিচালক (গোয়েন্দা) হিসেবে কমিশনার মো: মোজাম্মেল হক খানের বিরুদ্ধে পর্যন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেন। ওই প্রতিবেদনে ড. মোজাম্মেল হক খানের বড় স্ত্রীসহ ব্যক্তিগত নানা বিষয় অপ্রাসঙ্গিকভাবে তুলে ধরেন। ডিডি সেলিনা মনিকে দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করান। এই প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পাঠিয়ে মোজাম্মেল হক খানের চেয়ারম্যান পদে আসীন হওয়ার সম্ভাবনা রুদ্ধ করেন শিবলী। বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর ইকবাল মাহমুদ বিদায় নেয়ার পর পর মীর জয়নুল আবেদীন শিবলীসহ ইকবাল মাহমুদের একান্ত অনুগত কয়েকজন কর্মকর্তাকে ঢাকার বাইরে বদলির উদ্যোগ নেন কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান। বিষয়টি টের পেয়ে মীর মো: জয়নুল আবেদীন শিবলী মোজাম্মেল হক খানের বাসায় গিয়ে হাতেপায়ে ধরে তাকে ম্যানেজ করেন। এভাবে তিনি ঢাকার বাইরে নিজের বদলি ঠেকান। পরবর্তীতে তিনি উপর মহল থেকে তদবির করে বর্তমান কমিশনের কাছ থেকে ডিজি হিসেবে পদোন্নতি বাগিয়ে নেন। বর্তমান কমিশনকেও তিনি নিজের ওপর নির্ভরশীল করে তুলেছেন। তবে সুযোগ পেলেই তিনি দুদকে প্রেষণে কর্মরত প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বিষোদগার করেন। কিন্তু মাফিয়া ডন শিবলীর এসব অপকর্ম নিয়ে ইলেকট্রনিক কিংবা প্রিন্ট মিডিয়া কোনোদিন প্রতিবেদন প্রকাশ করবে না। কারণ সাংবাদিকরা তার প্রতি সাংঘাতিক রকম ভুক্ত, অনুরক্ত।

দুদকের ভেতর আরেক দুদক :মীর মো: জয়নুল আবেদীন শিবলীর উত্থানের কৌশলের কারণে তাকে ‘আইকন’ও ভাবেন অনেক কর্মকর্তা। তার তার সিনিয়র-জুনিয়র অনুরক্ত ‘ভক্তকূল’ অফিসার ও কর্মচারিদের নিয়ে তিনি তৈরি করেছেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট। প্রতিষ্ঠা করেছেন কমিশনের ভেতর আরেক কমিশন। তার সিন্ডিকেটভুক্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত। এর মধ্যে সিনিয়র কর্মকর্তারা হলেন, পরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী, পরিচালক বেনজীর আহম্মেদ, অবসরে চলে যাওয়া পরিচালক মো: ফরিদ আহম্মেদ পাটোয়ারি, শেখ মো: ফানাফিল্যাহ, পরিচালক মো: আব্দুল্লাহ আল জাহিদ। মধ্যম শ্রেণির কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম, ডিডি মাহবুবুল আলম, মোহাম্মদ নূরুল হুদা, বিশেষের ডেস্ক অফিসার মাহফুজা আক্তার,। আগে ছিলেন উপ-পরিচালক শেখ আব্দুস সালাম, মো: সামসুল আলম, এসএম সাহিদুর রহমান। উপ-পরিচালকদের মধ্যে রয়েছেন বহুল বিতর্কিত প্রমোটি উপ-পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক, গাজীপুরের ডিডি মোজাহার আলী সরদার, ডিডি আহসানুল কবির পলাশ, এডি সালাম আলী মোল্লা, এডি শহীদুর রহমান, সৈয়দ আতাউল করিম, জিএম আহসানুল কবির, উপ-পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম পলেন, ডিডি মাসুদুর রহমান, সেলিনা মনি, ডিডি মো: তালেবুর রহমান, ডিডি হেলাল শরীফ, এডি মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম, ১১ ব্যাচের ডিডি মো: শাওন মিয়া, এডি মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, ডিডি গুলশান আনোয়ার প্রধান মীর জয়নুল আবেদীন শিবলীর অনুগত কর্মকর্তা হিসেবে চিহ্নিত। এসব কর্মকর্তা সরাসরি শিবলীর কমান্ডে পরিচালিত হন। শিবলী যখন পরিচালক হিসেবে গোয়েন্দা সেলের দায়িত্বে ছিলেন তখন অনেকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার ফাইল তিনি নথিভুক্ত করেন। এখন বিশেষ (অনু:-তদন্ত)র মহাপরিচালক হয়ে নাক গলাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি ফাইলে। চেয়ারম্যান ও কমিশনারদ্বয়ের দোহাই দিয়ে কর্মকর্তাদের দ্বারা ফাইল নথিভুক্তির প্রতিবেদন প্রণয়ন করান। এ বিষয়ে প্রকৃতঅর্থেই কমিশনারদের নির্দেশনা রয়েছে কি না-কর্মকর্তাদের পক্ষে সেটি যাচাই করা সম্ভব হয় না।
গুরুত্বপূর্ণ নথির নিয়ন্ত্রণ শিবলীর হাতে : চট্টগ্রাম ভিত্তিক বড় বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির ফাইল, ঋণের নামে ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ,সিডিএ, বন্দর কর্তৃপক্ষ, বন বিভাগ, রোহিঙ্গা এনআইডি পাসপোর্ট কেলেঙ্কারি, পুলিশ কর্মকর্তাদের সম্পদ অনুসন্ধান, কাস্টমস, জমি অধিগ্রহণের অনুসন্ধানগুলোতে রয়েছে মহাপরিচালক মীর মো: জয়নুল আবেদীন শিবলীর হস্তক্ষেপ। তার হস্তক্ষেপের কারণে কর্মকর্তারা আইনানুগ ও বিধি অনুসরণ করে স্বাধীনমতো কাজ করতে পারছেন না। প্রায় সব কর্মকর্তা তার তদবিরে বিরক্ত হলেও তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। শিবলী রাতকে দিন, দিনকে রাত করার নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। তার অনুগত কর্মকর্তাদের অনেকে ডাকাতের মতো অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। কমিশনের ভেতর তারা শিবলীর ব্যক্তিগত এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন।

দু-চারটির উদাহরণ দেয়া যাক। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়ার ইন্টেলিজেন্স ইউনিট থেকে অর্থ পাচারের ১২শ’ কোটি টাকার অর্থ পাচারের একটি প্রতিবেদন আসে অনুসন্ধানের জন্য। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আসসাফা ট্রেডিং করপোরেশন, মুসা ট্রেডিং এবং ইয়াসির এন্টারপ্রাইজ এই অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত। শিবলীর নির্দেশে অনেকটা ডাকাতের মতো নথিভুক্তির সুপারিশ করেন উপ-পরিচালক সৈয়দ আতাউল করিম।
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে তিনি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত অনুসন্ধানের দায়িত্ব পান। এসময় থেকে এ সংক্রান্ত অনুসন্ধানগুলো তাকে দেয়া হতো। এই ঋণের নামে ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতকারী ব্যক্তি, বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালক, এমডি ও চেয়ারম্যানের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে। এরই ধারাবাহিকতায় বেসিক ব্যাংক, বিসমিল্লাহ, হলমার্ক, ডেসটিনি তদন্ত থেকে তিনি ব্যাংকের সঙ্গে তার সম্পর্ক তৈরি হয়। ফলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কোনো তদন্ত অনুসন্ধান তার জন্য আলোর মুখ দেখে না।

জনতা ব্যাংক থেকে অ্যাননটেক্স’র শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে রেখেছেন শিবলী। প্রতিষ্ঠানটির মালিক ইউনুছ বাদলের সঙ্গে তার বিশেষ সখ্যতা থাকায় কখনও তাকে আইনের আওতায় আনা হয়নি। নামমাত্র জমি বন্ধক রেখে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে অন্তত ১৪ হাজার কোটি টাকা সরিয়েছে জজ ভুইয়া গ্রুপ (জেবি গ্রুপ)। এটির বিষয়ে দুদকে একাধিক ফাইল থাকলেও শিবলী সেটি চেপে রেখেছেন।
চট্টগ্রামে পদ্মা ব্যাংকের ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান করতেন শিবলীর অনুগত চট্টগ্রাম-২ এর ডিডি মাহবুবুল আলম, হুমায়ুন কবিরসহ তিন কর্মকর্তা। সেটি ধামাচাপা দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টমসের কোনো নথি শিবলীর তদবিরে এগোতে পারে না। আলোচিত ‘সাইফ পাওয়ারটেক’র অনুসন্ধান তিনি ধামাচাপা দিয়ে রেখেছেন বহু বছর ধরে।

চট্টগ্রামের মো:নূরুল ইসলামের মালিকানাধীন ‘নোমান’ (জাবের অ্যান্ড জোবায়ের) গ্রুপের বিরুদ্ধে ৫ হাজার কোটি টাকা মালয়েশিয়া, দুবাই,সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে পাচারের প্রতিবেদন দেয় বিএফআইইউ। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব সম্পত্তি বন্ধক এবং অন্য ব্যক্তির সম্পত্তি বন্ধক রেখে অন্তত: ২৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অনুসন্ধান। প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াত সামরিক সচিব মো: জয়নুল আবেদীন বাচ্চুর নির্দেশনা এবং পরবর্তীতে দুদকের সাবেক কমিশনার মো: মোজাম্মেল হক খানের নির্দেশনায় মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী এটি ডিপ ফ্রিজে ফেলে রেখেছেন।
ব্যাংকের বড় বড় দুর্নীতির ফাইল ধামাচাপা দিয়ে তিনি ব্যাংকের চেয়ারম্যান,গভর্ণিং বডি, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমনকি বৃহৎ ঋণ খেলাপিদের ঘনিষ্টতা অর্জন করেন। এই ঘনিষ্টতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি নিজের আত্মীয়-স্বজনসহ অনেককে বিভিন্ন ব্যাংকে চাকরি দিয়েছেন। এমনকি দুদকে তার অনুগত ২০/৩০ কর্মকর্তা-কর্মচারিদের আত্মীয়-স্বজনদেরও যোগ্যতা অনুযায়ী ব্যাংকে চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

রোহিঙ্গাদের নামে এনআইডি ইস্যু এবং সেটির ভিত্তিতে পাসপোর্ট ইস্যুর বড় দুর্নীতির ফাইলগুলো ধামাচাপা দিয়ে রেখেছেন। চট্টগ্রাম ভিত্তিক অনেক পুলিশ কর্মকর্তার অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান আছে ধামাচাপা। বেশ ক’বছর আগে স্বীয় ঘনিষ্টবন্ধু এসপি মিজানুর রহমান এবং তার স্ত্রীর অবৈধ সম্পদের নথি ধামাচাপা দেন। ঢাকার ডিআইজি সৈয়দ নূরুল ইসলাম এবং তার স্ত্রীকে দায়মুক্তি দেয়ার ব্যবস্থা করেন। রোহিঙ্গা এনআইডি-পাসপোর্ট ইস্যুর দুর্নীতিতে যেসব পুলিশ কর্মকর্তা অভিযুক্ত হয়েছেন সবগুলোর পক্ষে তদবির করেন শিবলী। অনেক এসপি, এসবি, পর্যায়ের কর্মকর্তারাও এর আসামি আসে। তারা রোহিঙ্গাদেও প্রত্যায়ন পত্র দিতেন। এসব অবৈধ সম্পদের। গাজীপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের এসপি সারোয়ার হোসেনের অবেধ সম্পদেও ফাইল ধামাচাপা। তিনি কক্সবাজার ডিএসবি’র এসপি ছিলেন।

রোহিঙ্গাদের নামে পাসপোর্ট ইস্যুতে বেরিয়ে আসে পাসপোর্ট অধিদফতরের কর্মকর্তাদের ভয়াবহ দুর্নীতি। এসব দুর্নীতির ফাইলে রয়েছে মীর জয়নুল আবেদীন শিবলীর নানামাত্রিক ক্যারিকেচার। তার অযাচিত হস্তক্ষেপে দুর্নীতিপ্রবণ এই দফতরের কুখ্যাত বহু দুর্নীতিবাজের দুর্নীতির ফাইল নথিভুক্ত হয়েছে। অবসরে চলে যাওয়া পাসপোর্টের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো: রফিকুল ইসলামকে (বর্তমানে মৃত) দীর্ঘদিন আইনের আওতার বাইরে রাখার চেষ্টা করেন। সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক সিরাজউদ্দিন, কফিলউদ্দিন এবং ফজলুল হকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নিতে দেননি। অবসরে যাওয়া দুদকের দুর্নীতিবাজ পরিচালক আব্দুল আজিজ ভুইয়ার তদবিরে তিনি এসব দুর্নীতি ধামাচাপা দেন। মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট প্রকল্পে ১২শ’ কোটি টাকার দুর্নীতির অনুসন্ধান ধামাচাপা দিয়ে রেখেছেন ৯ বছর ধরে। ‘ডি-লারু কেলেঙ্কারি’ খ্যাত এই অনুসন্ধান একের পর কর্মকর্তা বদল করে রেখে দিয়েছেন নিজের কব্জায়। বিশাল এই দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তাকেই আইনের আওতায় তিনি আনতে দেননি। বরং ডি-লারু দুর্নীতির হোতা সাবেক প্রকল্প পরিচালক মাসুদ রেজোয়ানের দুর্নীতির তথ্য যিনি ফাঁস করেছেন সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মাবুদ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দায়ের করিয়েছেন অবৈধ সম্পদের মামলা।

কয়েক বছর আগে একটি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা পাসপোর্টের দুর্নীতি নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দুদকে পাঠায় তদন্তের জন্য। জয়নীল আবেদীন শিবলী সেটি ধামাচাপা দেয়ার ব্যবস্থা করেন। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে পাসপোর্টের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারি কোত্থেকে কার মাধ্যমে কিভাবে ঘুষের টাকা সংগ্রহ করেন। পাসপোর্টের ম্যান্টেইনেন্স ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ সাচ্চু মিয়া, ইঞ্জিনিয়ার কানিজ ফাতেমা চৌধুরী, উপ-পরিচালক হালিমা খাতুন শম্পা, সহকারি পরিচালক নাসরিন পারভীন নূপুর, মাসুদ রানা, মাহমুদুল হাসান, মোতালেব, উপ-পরিচালক রোজী খন্দকার কিভাবে কার মাধ্যমে ঘুষের টাকা নেন বিস্তারিত বিবরণ ছিলো ওই প্রতিবেদনে। এছাড়া উপ-পরিচালক শাহ মো: ওয়ালীউল্লাহ, শেখ মহের উদ্দিন, ডিডি তারিক সালমান, পরিচালক মাজহারুল ইসলাম, পরিচালক মো: আবু সাইদ, সহকারি পরিচালক জেবুন্নাহার পারভীনের ঘুষ গ্রহণের তথ্যও রয়েছে। পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) শিহাবউদ্দিন খান, ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের পরিচালক সাইদুর রহমান,পরিচালক (এমআরপি প্রকল্প) মো: সাইদুল ইসলাম, পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম খান, ডিডি আবু সাইদ, এডি ইসমাইল হোসেন, ডিডি (পরিকল্পনা) শাহদাত হোসেন, নজরুল ইসলাম ভুঁইয়া,এডি সফিকুর রহমান কে কিভাবে কত টাকা করে পেতেন তার ফিরিস্তি রয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থাকে দেয়া পরিচালক মোহাম্মদ তৌফিকুল ইসলামের স্বীকারোক্তিতে। পাসপোর্টের দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলেও দায়সারা গোছের মামলা হয়েছে তৌফিক ও ডিডি মাসুম হাসানের বিরুদ্ধে। সহকারি পরিচালক আজিজুল ইসলামের আরেকটি স্বীকারোক্তিতে ডিডি রাজ আহমেদ, মহেরউদ্দিন শেখ ও আলামিন মৃধার ঘুষ গ্রহণের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। কিন্তু দুদক মহাপরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট সবাইকে দায়মুক্তি প্রদানের বন্দোবস্ত করেছেন। দায়মুক্তি প্রদান প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন আব্দুল আজিজ ভুইয়া, বেনজির আহমেদ, আবু বকর সিদ্দিক, মো: সফিউল্যাহ ও সামসুল আলম গং।

মেডিকেল যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং স্বাস্থ্য সেবাখাতের প্রায় সব দুর্নীতির ফাইল চলে তার ইশারায়। স্বাস্থ্যখাতের চরিত্র মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু’র এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন শিবলী। মিঠুর বিরুদ্ধে একাধিক অনুসন্ধান-মামলা থাকলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা তিনি নিতে দেননি। একটি অনুসন্ধানে মিঠুকে তিনি তলব করেন দায়সারাগোছের নোটিশে। মিঠু যখন দেশত্যাগ করেছেন তখন তাকে নোটিশ পাঠিয়ে লোকদেখানো নাটক মঞ্চস্থ করেন। পক্ষান্তরে মিঠুর ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বীদের শায়েস্তা করার জন্য একের পর এক দায়ের করছেন মামলা।’
শিবলীর স্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)র কর্মরত একজন ডাক্তার। স্ত্রীর ঘনিষ্ট বন্ধু ডা: ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী স্বাস্থ্যখাতের অনেক দুর্নীতিবাজ ডাক্তারকে দায়মুক্তির ঠিকাদারি করেছেন। তার স্ত্রীর এক বান্ধবী প্রায়ই অ্যাপ্রোন পরে সোজা চলে যান তার কক্ষে। তিনি দুদকে আসেনই স্বাস্থ্যখাতের নানা ধরণের তদবির নিয়ে।
একইভাবে ব্যাংক সেক্টরে তিনি লুটেরাদের পক্ষে কাজ করেন। ব্যাংক লুটেরা চৌধুরী নাফিজ সরাফতের বিরুদ্ধে কোনো মামলাই তিনি করেন না। অথচ তার প্রতিপক্ষ বাবুল চিশতির বিরুদ্ধে দায়ের করছেন নিত্য নতুন মামলা। দাখিল করছেন চার্জশিটও। তবে বাবুল চিশতি ধোয়া তুলসিপাতা এমন দাবিও করা যাচ্ছে না।

পেট্রোবাংলা তথা জ্বালানি সেক্টরের দুর্নীতির অনুসন্ধানের একচ্ছত্র ঠিকাদারি নিয়ে রেখেছেন শিবলী। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে কয়লা উধাও হয়ে যাওয়ার নাটক সৃষ্টি, পরবর্তীতে প্রকল্প কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে সেটিকে নিছক ‘সিস্টেম লস‘ দেখানোর মাধ্যমে মুষিক প্রসব করা হয় ততকালিন দুদক পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলীর তত্ত্বাবধানে। উল্লেখ্য যে, তার স্ত্রীর সম্পর্কীয় ঘনিষ্ট আত্মীয় পেট্টোবাংলার সাবেক পরিচালক (পরিকল্পনা) আইয়ুব খান চৌধুরী পেট্টোবাংলার অধীন ১৩ প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির হোতা। কিন্তু তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলার সুপারিশ থাকলেও এসব মামলা দায়েরে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন শিবলী। পক্ষান্তরে আইয়ুব খান চৌধুরীর যারা প্রতিপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক বেনামী অভিযোগ দায়ের করে প্রায় নিষ্পত্তি হওয়া নথিও চাঙ্গা রাখছেন। দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ, সাবেক কমিশনার এফএম আমিনুল ইসলাম, ড. মোজাম্মেল হক খানের নাম জড়িয়ে তিনি আহসানুল কবির পলাশকে দিয়ে তিনি একের পর এক উড়োচিঠি দিচ্ছেন। বাপেক্স, তিতাস, কর্ণফুলি গ্যাস ফিল্ড, বাখরাবাদ গ্যাস ফিল্ডসহ জ্বালানি সেক্টরের সমস্ত দুর্নীতির ফাইলে নাক গলান শিবলী। জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত অনুসন্ধানগুলো ধামাপা দিয়ে তিনি বর্তমান কমিশনের সুনজরে আসেন। মাতারবাড়ি প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণের নামে যে পুকুর চুরি হয় সেটি ধামাচাপা দেন শিবলী। ওই দুর্নীতির সঙ্গে জেলা প্রশাসন ও ভূমিমন্ত্রণালয়ের বহু কর্মকর্তা-কর্মচারি জড়িত।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের যেকোনো নথি শিবলীর ইশারা ছাড়া চলে না। শিবলীর অনুগত কর্মকর্তা হিসেবে চট্টগ্রামে কাজ করতেন উপ-পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম। যিনি নিজেই এখন অবৈধ সম্পদ অর্জন অনুসন্ধানের মুখোমুখি। শিবলীর বিশ্বস্ত সিপাহসালার মাহবুব কাস্টমসের অনুসন্ধানের ফাইল তৈরি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। ফুফাতো ভাই মোখলেসউদ্দিনকে দিয়ে তিনি কাস্টমস থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়মিত মাসোয়ারা নিতেন। মাহবুবের আরেক দালাল হচ্ছেন আব্দুল মোবিন। তার মাধ্যমে শান্তিনগরের বাসায় ওসি শাহজাহানের কাছ থেকে দুুই দফায় ৭২ লাখ টাকা নেন। একই দালালের মাধ্যমে কক্সবাজার জমি অধিগ্রহণের একটি ফাইল থেকে মাহবুব নেন ১ কোটি ২০ লাখ টাকা।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের প্রকল্পের বড় বড় দুর্নীতির ফাইলও শিবলীর নিয়ন্ত্রণে। এসব ফাইল আগে তিনি দুর্নীতিবাজ উপ-পরিচালক শেখ আব্দুস সালামকে দিয়ে রাখতেন। সড়ক ও জনপথের দুর্নীতির অনুসন্ধানগুলো দিতেন অবসরে যাওয়া আরেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা মো: সামসুল আলম। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ফাইলগুলো দেখেন শিবলী নিজেই। ফলে নারকোটিকসের বড় বড় দুর্নীতির বিষয়ে মামলা নেই বললেই চলে। স্বীয় অধিনস্ত দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের দিয়ে তিনি মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্র্রণ অধিদফতরের ফাইলগুলোর অনুসন্ধান চালান। আর এই দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তারা নোটিস বাণিজ্যের মাধ্যমে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালক আব্দুল আজিজ দুর্নীতিগ্রস্ত অফিসারদের পক্ষে দুদকে তদবির করেন। অত্যন্ত ঘনিষ্ট আব্দুল আজিজ নারকোটিকসে শিবলীর এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন।

শিবলীর কালেক্টর ও এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন ডিডি নূরুল হুদা,ডিডি মোহাম্মদ সিরাজুল হক, মানব সম্পদের ডিডি রফিকুল ইসলাম, ডিডি মাহবুব আলম, ডিডি ইব্রাহিম, গাজীপুরের বর্তমান ডিডি মোজাহার আলী সরদার, বিশেষ ডেস্কও ডিডি মাহফুজা। ডিডি আবু বকর সিদ্দিক, আব্দুস সালাম, এডি সালাম আলী মোল্লা । হবিগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ করেন শহিদুর রহমান। ডিডি সৈয়দ আতাউল কবির রীতি মতো ডাকাত। তিনিও শিবলীর এজেন্ট। বিএফআইউ’র থেকে বড় ধরনের তদৗল্প আসে। চট্টগ্রাম খাতুন গঞ্জের আসসাফা ট্রেডিং। মুসা ট্রেডিং। ইয়াসির এন্টারপ্রাইজ। তিন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এবি ব্যাংকের ১২শ’ কোটি টাকা আত্মসাতের ফাইল নথিভুক্ত করেন সৈয়দ আতাউর করিম। শিবলীর মাধ্যমে তিনি এটি সম্পন্ন করেন।
পারটেক্স গ্রুপের আইটি প্রতিষ্ঠান ‘আম্বার আইটি ফার্ম’র বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে ইউসি ব্যাংকের শত শত কোটি টাকা আত্মসাতের ফাইলের পেছনে রয়েছে শিবলীর তদবির। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত আজিজ রাসেল গত বছর ১২ আগস্ট দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হন। এ সময়ে রাসেল দুদক কর্মীর গায়ে হাত তোলেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলাই রুজু হয়নি। শুধুমাত্র মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তদুপরি আম্বার আইটি ফার্মের অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে এখন অবধি মামলা হয়নি। এর নেপথে কলকাঠি নাড়ছেন শিবলী।

আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি বাণিজ্যের তদন্তের ফাইল দীর্ঘদিন ধরে ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে শিবলীর ইশারায়। বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)র চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতের অর্থ পাচার, বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের ফাইলও ধামাচাপা। ইউনূইস প্লাস্টিকের মালিক মো: ইউনূসের শেয়ার বাজার লুণ্ঠন, বেস্ট হোল্ডিংয়ের আইপিও ছেড়ে শেয়ার বাজার থেকে অর্থ লুটের অনুসন্ধান চেপে রেখেছেন অদৃশ্য ইশারায়। শুধু বড় বড় দুর্নীতির ফাইলই ধামাচাপা নয়। মীর মো: জয়নুল আবেদীন শিবলী দুদকের মহাপরিচালক ( বিশেষ) পদে আসীন হওয়ার পর হওয়ার পর কোনো কমকর্তা শান্তিতে কাজ করতে পারছে না । তিনি তদবির করছেন। অন্য শাখার তদন্ত প্রতিবেদনও দাখিল করতে হচ্ছে আন-অফিসিয়ালি তাকে দেখিয়ে।

ডিডি মো: তালেবুর রহমান শিবলীর কালেক্টর। ১১ ব্যাচের ডিডি মো: শাওন মিয়া। হেলাল শরীফ। আহসানুল কবির পলাশ তার কালেক্টর। পলাশের বিরুদ্ধে একটি ডিপি ছিলো। সেটি নথিভুক্ত করে ডিডি হিসেবে পদোন্নতির ব্যবস্থা করেন শিবলী। দিনাজপুর থেকে তাকে নিয়ে আসেন প্রধান কার্যালয়ে।
ডিডি মো: আহসানুল কবির পলাশ। কমিশন তাকে ডিডি পদোন্নতির তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছিলো। পরে পলাশ এক পরিচালককে একটি হেরিয়ার গাড়ি উপহার দিয়ে ডিডি পোস্ট নিশ্চিত করেন। পলাশের বিরুদ্ধে রয়েছে নোটিশ বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ। তিনিও পেট্টোবাংলার সাবেক পরিচালকব (পরিকল্পনা) আইয়ুব খানের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন। শিবলীর নেতৃত্বে পরিচালক বেনজীর আহমেদ, অবসরে যাওয়া ডিডি সামসুল আলম, ডিডি আবু বকর সিদ্দিক, আহসানুল কবির পলাশ জ্বালানিখাত বিষয়ক দুর্নীতির সিন্ডিকেট। আইয়ুব খানের হয়ে তারা বেনামী চিঠি দিয়ে জ্বালানি সেক্টরের বিভিন্নজনের নামে অনুসন্ধানের ফাইল তৈরি করেন।

এছাড়া দুদকে বহুল বিতর্কিত দুর্নীতিগ্রস্ত প্রমোটি অফিসারদেরও মীর মো: শিবলী শেল্টার দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে রয়েছেন উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার, সহকারি পরিচালক ভাগিনা মাহবুব, উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নূরুল হুদা, মোহাম্মদ সিরাজুল হক। এর মধ্যে ভাগিনা মাহবুব অন্য সেকশনে কাজ করলেও তার ওপর রয়েছে তার বিশেষ আশীর্বাদ। তার এ বাহিনীকে তিনি পরিচালনা করেন অত্যন্ত কৌশলে। তাৎপর্যপূর্ণ মামলাগুলো তাদেরকে দিয়ে অনুসন্ধান-তদন্ত করান। তাদেরকে দিয়ে তিনি শত শত তদন্ত ও অনুসন্ধান ধামাচাপা দিয়ে রেখেছেন।

বর্তমান দুদক সার্ভিস এসোসিয়েশেনের সেক্রেটারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম পলেন, ডিডি মাসুদুর রহমান বিভিন্ন ক্ষেত্রের বড় বড় দুর্নীতিগুলো ‘আবিষ্কার’ করেন। সম্প্রতি ডিডি সৈয়দ নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধেও ব্যাপক দুর্নীতির খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
যখন যিনি তখন তার :
ছাত্র জীবনে তিনি তেমন মেধাবী ছাত্র ছিলেন না। ইংরেজীতে কথা বলা কিংবা এক পৃষ্ঠা ইংরেজী লেখার যোগ্যতা তার নেই। মাদরাসা শিক্ষা শেষ করে ভর্তি হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষা জীবন শেষ করে ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বরে মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী যোগদান করেন দুদকে। ব্যত্যয় না ঘটলে তিনি অবসরে যাবেন ২০২৭ সালের অক্টোবরে। কিন্তু ততোদিনে তার হাতে প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুদক কি পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কত কর্মকর্তার ক্যারিয়ার বিপন্ন হবে, কত নিরীহ মানুষ তার পাতা জালে অনুসন্ধান-তদন্তের নামে নি:স্ব হবেন তা কেউ অনুমানও করতে পারে না। মিহি কৌশলের আড়ালে থাকা কুৎসিত শিবলীকে কমিশন কিংবা কেউ কখনও আবিষ্কারই করতে পারবে না। তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন। এগিয়ে যাবেন। যে কমিশন কিংবা যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক, বিপুল সম্মান নিয়েই হয়তো কমিশন থেকে বিদায় নেবেন। কারণ মীর মো: জয়নুল আবেদীন শিবলী পৃথিবীর সহিষ্ণু প্রাণীদের একজন। মুখে সবসময় লাগিয়ে রাখেন কৃত্রিম হাসি। মধুর ব্যবহার। দৃষ্টান্তসহ কথায় কথায় ছাড়েন নীতিবাক্য। কুরআন-হাদিসের রেফারেন্সও টানেন। তারউর্ধ্বতন কর্মকর্তার চাহিদানুগ অনুসন্ধান-তদন্ত প্রতিবেদন দিয়ে ‘বস’কে খুশি রাখার অদ্ভুত কৌশল তার রপ্ত। তার ‘বস’ চাহিদানুগ রিপোর্ট দিয়ে কি করবেন-এই প্রশ্ন তিনি করেন না। এটিই হচ্ছে দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনারদ্বয়ের কাছে তার বিশ্বস্ততা অর্জনের কৌশল। কাউকে দায়মুক্তি দিয়ে কিংবা নিরীহ কাউকে ফাঁসানোর ইঙ্গিত পেলে তিনি সেটি সম্পন্ন করেন পেশাদার জল্লাদের মতোই। অত্যন্ত নীতিবহির্ভুত অন্যায় কাজটি সম্পাদন করতেও তার বুক কাঁপে না। এ ক্ষেত্রে তার যুক্তি হচ্ছে, ‘কর্তার ইচ্ছায় কর্ম’। অর্থাৎ ন্যায়-অন্যায় তার কাছে কোনো বিষয় নয়। এটিই শিবলীর কাছে ‘ পেশাদারিত্ব’।

কমিশনারদেরকে তিনি সদা ‘বস বস’ করেন। তার নিয়োগ বিএনপি সরকার আমলে। সে সময় তিনি ছিলেন তৎকালিন দুদক মহাপরিচালকদের প্রিয়পাত্র। ২০০৪ সালে যখন কমিশন হলো তখন নিয়োগ পান বিএনপি’র পছন্দসই কমিশন। বিএনপি নিযুক্ত বিচারপতি সুলতান হোসেন খান, প্রফেসর মনিরুজ্জামান মিঞা এবং মো: মনিরউদ্দীনের সময় মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী ‘বিএনপি’র হয়ে যান। ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী সময় সাবেক সেনা প্রধান হাসান মশহুদ চৌধুরীর সময়ও তিনি ওই চেয়ারম্যানের ‘প্রিয়পাত্র’ হয়ে যান। ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় এলে পরিচালক হিসেবে মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী সাচ্চা আওয়ামীলীগার বনে যান। গোলাম রহমান,বদিউজ্জামান,ইকবাল মাহমুদ-সব চেয়ারম্যান আমলেই তিনি ‘তাদের লোক’। সরিসৃপের মতো রং বদলাতে শিবলীর এক মিনিটও সময় লাগে না। গত আগস্টমাস জুড়ে ১৫ আগস্ট ‘জাতীয় শোক দিবস’ হিসেবে তার বুকে আটকানো ছিলো কালোকাপড়। বর্নচোরা এই কর্মকর্তা কখন কোন দিকে খেলেন সেটি তিনি ছাড়া কেউ বলতে পারেন না। হালে একনিষ্ঠ আওয়ামীলীগার সাজলেও বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর-রিজভিদের কাছে তিনি এখনও ‘আমাদের শিবলী’ হিসেবে পরিচিত। অথচ, গত দেড় দশকে দুদক দ্বারা যতসব বিএনপি নেতা নিগৃহিত হয়েছেন মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী ছিলেন সেই নিগ্রহের নিষ্ঠুর জল্লাদ। কারও পক্ষেই তিনি প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে কোনো ভূমিকা রাখেন নি। তার হাত দিয়ে অনেক বিএনপি’র নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের হয়েছে। চার্জশিট হয়েছে। ইটিভি’র আব্দুস সালামের মতো ব্যক্তির রিমান্ডও হয়েছে। বাহ্যত: তিনি মিডিয়াবান্ধব মনে হলেও কোনো সংবাদে তার কিঞ্চিৎ সমালোচনা হলেই তিনি ওই সাংবাদিকের বাপ-মা তুলে গালাগাল করেন। বাহ্যত: সাংবাদিকদের সঙ্গে খাতির রাখায় কোনো সাংবাদিকই তার কর্মকান্ড নিয়ে সমালোচনা করেন না। দুদকে যাতায়াতকারী প্রায় সব সাংবাদিক তাকে ‘ন্যায় নিষ্ঠার প্রতীক’ হিসেবে জানেন। অথচ দেশের শীর্ষস্থানীয় এমন কোনো দুর্নীতিবাজ নেই যাকে তিনি অনুসন্ধান-তদন্তের আড়ালে বিশেষ সুবিধা দেননি। শীবলীর আর্থিক লেনদেন নিয়ে দালিলিক কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি। কিন্তু শীর্ষস্থানীয় দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে তার রয়েছে সখ্যতা। মুসা বিন শমসের থেকে শুরু করে ইয়াবা বদি, এস.আলম গ্রুপ, দরবেশ বাবা, নূর আলী, এনএইচ বুলু, বসুন্ধরার গ্রুপ, যমুনাগ্রুপ, মাগুরা গ্রুপ, জাবের অ্যান্ড জোবায়ের লি:, প্রাণ-আরএফএল, ইউনাইটেড গ্রুপ,আলআমিন গ্রুপ,আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের মতো ভূমিদস্যু লুটেরা শ্রেণির সঙ্গে তার রয়েছে সখ্যতা। ব্যাংক লুটেরা হামীম গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, সামিট গ্রুপ,লা- মেরিডিয়ান গ্রুপে তিনি চাকরি দিয়ে রেখেছেন অনেক স্বজনকে। চাকরির শুরুর দিকে মীর জয়নুর আবেদীন শিবলী ছিলেন দুদকের ব্যাংক শাখায়। ব্যাংকের দুর্নীতি নিয়ে কাজ করতেন তিনি। সেই সুবাধে পরবর্তীতে তাকে হলমার্ক গ্রুপ, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, বেসিক ব্যাংকের অনুসন্ধান-তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। এখন ব্যাংকিং সেক্টরে যত আত্মসাতের অনুসন্ধান-তদন্ত রয়েছে সবই তার শাখা (বিশেষ অনুসন্ধান-তদন্ত) থেকে পরিচালিত হচ্ছে। বিআর স্পিনিং, মাতারবাড়ি ভূমি অধিগ্রহণ দুর্নীতি, চট্টগ্রাম ভিত্তিক বড় বড় দুর্নীতির ফাইল তার দায়িত্বে। বড় পুকুুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি, কর্ণফুলি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউন কোম্পানিসহ পেট্টোবাংলার বড় বড় দুর্নীতির ফাইল তিনি ধামাচাপা দিয়ে রেখেছেন। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), বন্দর কর্তৃপক্ষ, পোর্ট,কাস্টমস, কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং, জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প তথা চট্টগ্রাম ভিত্তিক সমস্ত দুর্নীতির ফাইল পাহারা দিয়ে রাখেন জয়নুল আবেদীন। আবার কখনও কখনও ব্যক্তি বিশেষকে কোনঠাঁসা করতে তিনি ভুয়া দুর্নীতির ফাইল তৈরি করে ফরমায়েশী অনুসন্ধানের ব্যবস্থাও করে থাকেন।

নিজের স্বার্থই যার কাছে মুখ: মীর মো: জয়নুল আবেদীন শিবলী সম্পূর্ণ আত্মকেন্দ্রিক একজন মানুষ। নিজের পদ-পদবি পদোন্নতির জন্য অন্যকে বলির পাঁঠা বানাতেও দ্বিধা করেন না। কমিশনে তিনি অনেক প্রভাবশালী হলেও কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারি বিপদে পড়লে তিনি পাশে দাঁড়ান না। এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ- অত্যন্ত সৎ কর্মকর্তা খন্দকার এনামুল বাছিরকে ফাঁসানো হয় তারই পরিকল্পনা ও সহযোগিতায়। এনামুল বাছির মহাপরিচালক হয়ে গেলে জয়নুল আবেদীন শিবলীর ডিজি হওয়া সুদূর পরাহত। এ কারণে এনামুল বাছিরের বিপদকে শিবলী এক প্রকার উপভোগ করেছেন। অত্যন্ত দক্ষ কর্মকর্তা নাসিম আনোয়ারের ডিজি হতে না পারার পেছনে রয়েছে শিবলীর হাত। ইকবাল মাহমুদের কান ভারি করে নাসিম আনোয়ার সম্পর্কে বিষিয়ে তুলে ছিলেন। তখন তিনি ছিলেন ইকবাল মাহমুদের বহু অবৈধ কর্মকা-ের একনিষ্ঠ সহযোগী।

দুদকের কোনো কর্মকর্তা ডিপি কিংবা সাময়িক বরখাস্তের মতো বড় ধরণের শাস্তির মুখোমুখি হলে তিনি পাশে দাঁড়ান না। দুদকের চাকরিচ্যুত উপ-সহকারি পরিচালক মো: শরীফউদ্দীনকে চাকরিচ্যুত করার পেছনে মীর জয়নুল আবেদীন শিবলীর ছিলো সরাসরি ইন্ধন। কারণ শরীফ শীবলির আত্মীয় পেট্টোবাংলার শীর্ষদুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা আইয়ুব খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা রুজুর সুপারিশ করেছিলেন। পক্ষান্তরে ফুটফরমায়েশ খেটে দেন বিধায় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা আহসানুল কবির পলাশকে তিনি দিনাজপুর থেকে ঢাকায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন প্রাইজপোস্টিং দিয়ে। করেন সহকারি পরিচালক থেকে উপ-পরিচালক হিসেবেপদোন্নতির ব্যবস্থাও। এছাড়া দুর্নীতিগ্রস্ত সহকারি পরিচালক প্রবীর কুমার দাসকেও তিনি রংপুর থেকে নিয়ে আসেন প্রধান কার্যালয়ে।
শরীফকা-ের প্রেক্ষিতেদুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তারা দুদক সার্ভিস এসোসিয়েশন (দুসা) করেন। এ আন্দোলনে চাকরির ঝুঁকি নিয়ে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারি রাজপথে নেমে এলেও কৌঁসুলি ভূমিকায় ছিলেন জয়নুল আবেদীন শিবলী। পরবর্তীতে সংগঠিত দুসা কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নিবৃত করার এজেন্ডা নিয়ে হিমশিম খাওয়া কমিশনের প্রিয়পাত্র হন শিবলী। একপর্যায়ে নির্ভরতার প্রতীক হয়ে যান তিনি। এভাবে সিনিয়র ও যোগ্য কর্মকর্তাদের ডিঙ্গিয়ে তিনি বর্তমান কমিশনের কাছ থেকে কৌশলে বাগিয়ে নেন মহাপরিচালকের পদোন্নতি।

জানা গেছে, ড. মোজাম্মেল হক খানকে দুদক চেয়ারম্যান করার প্রলোভন দিয়ে চাকরি থেকে তাকে ইস্তফা দেওয়ান ইকবাল মাহমুদ। মোজাম্মেল হক খানকে দুদকে এনে পরে স্বার্থের সংঘাতে ল্যাঙ মারেন। ড. মোজাম্মেল হক খানকে ল্যাঙ মারার গ্রাউন্ড তৈরি করে দেন শিবলী। এ সময় শিবলী ছিলেন চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের নেতৃত্বাধীন দুদকের ‘অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি দমন কমিটি’র দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি। নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিটের দায়িত্বে ছিলেন শিবলী। শিবলী মোজাম্মেল হক খানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ সম্বলিত নথি তৈরি করে দেন। সাউথ বাংলা ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের মোল্লার কাছ থেকে অনুদান গ্রহণ, জাবের অ্যান্ড জাবের লি:ও কাছ থেকে ৭ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণ, গৃহায়ণ ও গণপূর্তের তৎকালিন চেয়ারম্যান রাশিদুল হাসানের কাছ থেকে নানাবিধ সুবিধা গ্রহণ, বহুবিধ দুর্নীতি ও মোজাম্মেল হক খানের প্রথম স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা বেবীর অভিযোগ ইত্যাদি নিয়ে তৈরি করেন দেন এই নথি। এই নথি ইকবাল মাহমুদ পৌঁছে দেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। প্রধানমন্ত্রী যারপর নাই ক্ষুব্ধ হন মোজাম্মেল হক খানের প্রতি। এ কারণে মোজাম্মেল হক খান তার প্রত্যাশিত চেয়ারম্যান পদে আসীন হতে পারেন নি। অনেক কাজের ‘কাজী’ মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী এখনও দুদকের তিন শীর্ষ কর্মকর্তার অত্যন্ত আস্থাভাজন ও প্রধান অবলম্বন। কিন্তু পাশা উল্টে গেলে এই শীবলী তিন শীর্ষ কর্মকর্তার হাতে হাতকড়া পরাতো এতটুকুন দ্বিধা করবেন না। এ হেন ঠান্ডামাথার ভয়ঙ্কর কর্মকর্তা ডিজি মীর মো: জয়নুল আবেদীন শিবলীর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে নেমেছে।

Leave a Comment

You may also like

Critically acclaimed for the highest standards of professionalism, integrity, and ethical journalism. Ajkerkotha.com, a new-generation multimedia online news portal, disseminates round-the-clock news in Bangla from highly interactive platforms.

Contact us

Copyright 2021- Designed and Developed by Xendekweb