গত ১৫ মার্চ ২০২৪ তারিখে কুমিল্লা সদর উপজেলার শাসন গাছা ইউনিয়নের অর্নব হত্যাকান্ডের মূল হোতা কুমিল্লা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আহমেদ নেয়াজ পাভেল। পাভেল হলো শাসনগাছা ইউনিয়নের সন্ত্রাসের জনক এবং গড ফাদার। মোল্লা বাড়ির রাব্বী আহমদ এবং মধ্যম পাড়ার সাক্কু দুজনেই তার লালিত পালিত সন্ত্রাসী এবং এই দু’জনের হাতেই অস্ত্র তুলে দেয় পাভেল। মূলত রাব্বী নম্র-ভদ্র স্বভাবের হলে ও পাভেলের ইন্ধনে অস্ত্রবাজি করে বাসস্ট্যান্ড দখল করে। অন্যদিকে সাক্কুর বাবা দীর্ঘদিন বিএনপি’র রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও সাক্কু পাভেলের প্রত্যক্ষ মদদে ইয়াবা ব্যবসা,বাসস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি এবং অস্ত্র ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ে। অর্নব ছাত্রদল করলেও এলাকায় অবস্থান করার জন্য সাক্কুর সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখে বাস কাউন্টারে চাকরি করে আসছিল। শাসনগাছা বাসস্ট্যান্ডের দখল নিয়ে মূলত গোলাগুলির সূত্রপাত ঘটে।
গত ১৫ মার্চ প্রথমে সাক্কু গ্রুপ রাব্বির লোকজনের উপর আক্রমণ করে এবং কয়েক রাউন্ড গুলি করে রাব্বীর লোকজনের কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে। তখন রাব্বি গ্রুপ পাভেলকে বিষয়টা জানালে গডফাদার পাভেলের নির্দেশে মোল্লা বাড়ির লোকজন রাব্বীর নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র এবং বন্দুক নিয়ে মধ্যমপাড়ার সাক্কু গ্রুপের উপর হামলা চালায়, এবং সে হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হয়। আহতদের মধ্যে অর্ণব নামের ছাত্রদল নেতা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মকভাবে আহত হয়। পরবর্তীতে অর্ণবকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করে।
পাভেলের নির্দেশে এই হামলার ঘটনা ঘটে এবং শাসনগাছা বাসটার্মিনালে কাজ দেয়ার নামে এলাকার বহু যুবকের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে পাভেল। পাভেলের আশ্রয় প্রশ্রয়ে সাক্কুকে তার অনুগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্র মহড়া দিতে দেখা গিয়েছে, কিন্তু প্রাণভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলেনি। মূলত শাসনগাছা এলাকায় যত ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে এসকল মূল গডফাদার আহমেদ নেওয়াজ পাভেল।
কুমিল্লা সদর শাসনগাছা বাসটার্মিনালে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে চলছে পাভেল বাহিনীর রাজত্ব। গুন্ডামী, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, চাঁদাবাজি,ছিনতাই এবং মাদক ব্যবসা কোনো কিছুই বাদ নেই। আর এসকল অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের আহমেদ নেওয়াজ পাভেলের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এবং আশ্রয়ে। পাভেল কুমিল্লা সদর উপজেলা আওয়ামী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার পূর্বে ছাত্রলীগের ক্যাডার ছিলো। আজকের গডফাদার পাভেল গুন্ডামি সন্ত্রাসী চাঁদাবাজিতে হাতেখড়ি অর্জন করে ছাত্রলীগের রাজনীতি করার সময়েই। ৯৫-৯৬ সালে পাভেল কুমিল্লা শহরের মোগলটুলিতে যুবলীগ নেতা জায়েদ বাবুকে ভর দুপুরে প্রকাশ্য দিবালোকে রামদা ও চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে ৮ বছর ভারতে পলাতক ছিল। নিজ নেতা জায়েদ বাবুকে হত্যার মধ্যে দিয়ে পাভেল তার সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সূচনা করে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার পরে সন্ত্রাসীদের গড়ফাদার পাভেল শাসনগাছা বাসটার্মিনাল এলাকায় রাজনৈতিক অধিপত্যে বিস্তারের জন্য টাকার বিনিময়ে তৈরি করে কিশোর গ্যাং এবং যুবকদের নিয়ে গঠন করে সশস্ত্র বাহিনী। কিছুদিন পর তার লালিত সন্ত্রাসীদের নিয়ে শাসন গাছা বাস টার্মিনালে হামলা করে সেটা দখল করে। এরপর থেকে বাসটার্মিনালকে কেন্দ্র করে শুরু তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ড।
পাভেল বাহিনীর অত্যাচারে শাসনগাছা বাসটার্মিনাল এলাকায় কোন বহিরাগত পুরুষ মহিলা নগদ টাকা,দামী মোবাইল এবং স্বর্ণালংকার সাথে নিয়ে চলাচল করতে পারেনা। পাভেলের ছিনতাই ও চাঁদাবাজির সকল টাকা কালেকশন ও ভাগাভাগি করে মধ্যমপাড়া ইকবাল মিয়া ও তার ছেলে সাখাওয়াত হোসেন সাক্কু। সাক্কুর মাধ্যমে এসকল চাঁদাবাজির টাকা ভাগ যায় কোতয়ালি থানা পুলিশের কাছে। সেজন্যেই কোতায়ালী থানা পুলিশ পাভেল এবং তার বাহিনীর কোন সন্ত্রাসী এবং চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করেনা। উল্লেখ্য র্যাব-১১-এর টিম বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে ইয়াবা মামুন সহ কয়েকজনকে আটক করলেও পাভেল তাদেরকে জামিনে বের করে নিয়ে আসে। কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে পাভেল তার গুন্ডা বাহিনী দিয়ে তুলে নিয়ে পথকলি স্কুলের একটি রুমে আটক করে রেখে মারধর করে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে নারী,ইয়াবা ফেনসিডিল দিয়ে বা,মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেয়। শাসনগাছাবাসী গডফাদার পাভেলের নিকটে জিম্মি। পাভেলের সশস্ত্র গুন্ডা বাহিনীর কয়েকজন অপারেটর হলো সা্ক্কু, ইয়াবা মামুন, টিটু, সহিদ, জনি।
কয়েক বছর আগে জাকির নামে একজন যুবককে ক্রসফায়ার করে হত্যা করে পাভেল। শাসনগাছা বড়বাড়ির হাসান নামে একটি ছেলে তার পাভেলের বিরুদ্ধে ফেইসবুকে লাইভ করায় তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে মারধর করে পুলিশ ধরিয়ে দেয়। পরবর্তীতে আবারো তুলে নিয়ে ২ মাস গুম করে রাখে ও তার পা হাত ভেঙে দেয় পাভেল।
এমনকি পাভেলের সন্ত্রাসী হামলার শিকার তার নিজ পরিবারের সদস্যরা। তার আপন ভাই বোন কেউ রেহাই পায়নি তার অত্যাচার,মামলা-হামলা থেকে। সেজন্য শাসনগাছার গ্রামবাসী পাভেলের সন্ত্রাসী হামলার ভয়ে আতংকে থাকে সবসময়। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পাভেলের নেতৃত্বে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে। পাভেল বাহিনীর প্রধান ক্যাডার সাক্কু শটগান দিয়ে গুলি করে কয়েকজনকে আহত করে। এসব তথ্য জেলা প্রশাসনের কাছেও রয়েছে।
কুমিল্লা সদর আদর্শ উপজেলার শাসনগাছা এলাকাকে সন্ত্রাস,চাঁদাবাজ এবং মাদক ব্যবসামুক্ত রাখার জন্য অতি দ্রুত আহমেদ নিয়াজ পাভেলকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার এলাকার আপামর জনগণের দাবী।