28, April, 2024
Home » সুজাতা থেকে বিনয়: উড়ে আসা থেকে তলে তলে সম্পর্ক

সুজাতা থেকে বিনয়: উড়ে আসা থেকে তলে তলে সম্পর্ক

234 views

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীতে বাংলাদেশের একতরফা নির্বাচনে হাসিনাকে জিতিয়ে আনতে ভারত তাদের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংকে ঢাকায় পাঠিয়েছিল, কিন্তু এর ১০ বছর পরেও সেই হাসিনাকেই ক্ষমতায় দেখতে তারা প্রকাশ্যে কিছু করতে পারছে না, তলে তলে চেষ্টা করে মরিয়া। কিন্তু এবারে কেনো বিজয় কোয়েত্রাকে ঢাকায় পাঠাতে পারছে না তারা? কেনো নানা উছিলায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অনুনয় বিনয় করতে হচ্ছে, বাংলাদেশে সুষ্ঠু ভোট হয়ে গেলে তাতে ভারত বিরোধীরা ক্ষমতায় আসবে, তাই যুক্তরাষ্ট্র যেনো ফ্রি ফেয়ার ইনক্লুসিভ ইলেকশনের জন্য বাংলাদেশকে আর চাপ না দেয়, এমন গুজব ছড়ানো হচ্ছে! প্রশ্ন হলো, ১০ নভেম্বরের দিল্লি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে কি সত্যই বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গ এজেন্ডাভুক্ত  ছিল? নাকি এজেন্ডার বাইরে ঘুরিয়ে পেচিয়ে রিজিওনাল সিকিউরিটির অযুহাতে তুলে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে এনেছে ভারতীয়রা, নাকি সাইড লাইন টক ছিল? বাংলাদেশে নির্বাচন হলে কারা ক্ষমতায় যাবে, তা নিয়ে দিল্লির পেটব্যথার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নতুন কিছু নয়। এর আগে তারা বহুবার ওয়াশিংটনের কাছে আবদার করেছে। কিন্তু কেনো বাংলাদেশের রাজক্ষমতায় বিনাভোটের হাসিনাকেই আপনাদের প্রয়োজন? যদিও ওয়াশিংটন ভারতকে বলেছিল, বাংলাদেশের অন্যদের সাথেও সম্পর্ক গড়ে তুলতে, কিন্তু তারা সব ডিম এক ঝুড়িতে রাখতে গেলেন কেনো? তাইতো দিল্লি এখন চক্ষে সর্ষে ফুল দেখছে! ফলে সমস্যা তো বাংলাদেশের নয়, বরং ভারত কেনো ভোটডাকাত হাসিনাকেই আবার বাংলাদেশের ক্ষমতায় দেখতে চাইছে? দিল্লিতে ২+২ বৈঠক শেষে সেই পুরানি তোতলামি বাত, যাতে ঢাকাতে হাসিনার ভোটডাকাতির আয়োজকরা দিল্লির সমর্থন আছে এমন উৎসাহ পায় – তাই তো?

ভারতের চোখে দেখতে গিয়ে বিপত্তি

বাংলাদেশকে ভারতের কাছে ইজারা দিয়েছিল বারাক ওবামা প্রশাসন। মানে ভারত ছিল লোকাল চৌকিদার। কিন্তু হাসিনা যখন সুযোগ বুঝে টাকার বিনিময়ে চীনের পকেটে ঢুকে যায়, তখন টনক নড়ে ওয়াশিংটনের। তারা বাংলাদেশকে ভারতমুক্ত করতে দীর্ঘমেয়াদী প্লান করে। চৌকিদারী ভেঙে দিয়ে ওয়াশিংটন নিজেরাই বাংলাদেশকে হ্যান্ডেল করার উদ্যোগ নেয়। একের পর এক ঢাকায় আসতে থাকে ওয়াশিংটনের অফিশিয়ালরা। ২০২০ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী মন্ত্রী লরা স্টোন জানিয়েছিলেন, তারা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) আর দিল্লির চোখে বাংলাদেশকে দেখে না। এর কিছু দিন পরে তারা বাংলাদেশ ডেস্ককে ভারত থেকে আলাদা করেছে, আলাদা অফিসার দিয়ে ডিল করে।

যুক্তরাষ্ট্র হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারে, ভারত একটা ফেইল্ড কেস। ভারতীয় লোকাল মাদবারী হাসিনাকে চীনের পেটে ঢোকা থেকে রুখতে পারেনি। তাই দিল্লিকে সরিয়ে ওয়াশিংটন নিজেদের হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ টপিক। এটা পলিসি ডিসিশন। একই ঘটনা ঘটে ২০ বছরব্যাপী আফগানিস্তান অক্যুপেশন নিয়ে। দখলের পরে দুই দশক ভারতকে দেয়া হয়েছিল লীজ। আফগান সেনা রিক্রুট থেকে প্রশিক্ষন সবই করতো ভারতীয়রা। কিন্তু ভারত আমেরিকার স্বার্থ দেখার পরিবর্তে নিজেরা ব্যবসা বানিজ্যেএতই মত্ত হয়ে ওঠে যে, শেষ পর্যন্ত আমেরিকাকে আফগানিস্তান ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয় ভারতকে না জানিয়েই। ব্যাপক জীবন ও সম্পদ ত্যাগ করে ভারতকে ফিরে আসতে হয় আফগানিস্তান থেকে।

 

বাংলাদেশ নিয়ে নতুন পলিসি

গত দেড় দশকের শেখ হাসিনার বিনাভোটের শাসনকালে ভারতের দাদাগিরির চরম রূপ ধারণ করে। বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ, ক্ষমতায় কে থাকবে না থাকবে, সশস্ত্র বাহিনী, পররাষ্ট্রনীতি, সিভিল প্রশাসন থেকে শুরু করে ব্যবসা বানিজ্য সবকিছুই এখন ভারতের হাতে। এতে করে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি কার্যত সার্বভৌমত্ব হারিয়েছে। এখন আর বাংলাদেশের স্বাধীন কোনো পররাষ্ট্র নীতি নাই, পুরোটাই ভারত নির্ভর। প্রায় দেড় মিলিয়ন ভারতীয়কে এদেশে কাজ করতে সুযোগ দিয়েছেন শেখ হাসিনা, যারা বছরে ১০ বিলিয়ন ডলারের অধিক ভারতে নিয়ে যায়, অবৈধভাবে নেয় আরও বেশি। বাস্তবে, শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ভারতের বাজার ও আয়ের উর্বর ভূমিতে পরিণত করে দিয়েছেন। আর এরই ফাঁকে হাসিনার রাজত্বে ঋণের দুষ্টচক্র নিয়ে বেশ জায়গা করে নেয় চীন। এসব বিষয় উপলব্ধি করে যুক্তরাষ্ট্র নতুন পলিসি ঠিক করেছে- বাংলাদেশ তারা নিজেরাই হ্যান্ডেল করবে। তাই বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নানাবিধ চাপ দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এতদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র বলতো, তারা বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়, কিন্তু গতকাল থেকে ভাষা চেঞ্জ করে বলছে, নির্বাচন করতে যা করা দরকার, তাই তারা করবে।

 

বার্মা অ্যাক্ট

বাংলাদেশে আমেরিকায় ঢুকতে হবে, কারণ বাংলাদেশের ভূমি ব্যাবহার করে তারা বার্মায় তাদের পলিসি বাস্তবায়ন করবে। ইতোমধ্যে মার্কিন পার্লামেন্টে বার্মা অ্যাক্ট পাশ করেছে, যা একটি সময় নির্ধারনী আইন। শোনা যায়, বার্মা ভাগ করার পরিকল্পনাও আছে। ইতোমধ্যে বর্মার ৬০ ভাগ এলাকা বিদ্রোহিদের দখলে চলে গেছে, গতকাল বর্মার প্রেসিডেন্ট দেশটি ভাগ হয়ে যেতে পারে এমন আশংকা প্রকাশ করেছেন। তবে চীন এবং ভারত আমেরিকাকে এই অঞ্চলে ঢুকতে দিতে রাজী নয়, তাহলে তাদের উভয়ের স্বার্থ নষ্ট হয়। এ কারণে চীন ভারত দু’জনেই বর্মার জান্তার সাথে ফ্রেইন্ডলি। তাদের নিজেদের মধ্যে বিরোধ থাকলেও বাংলাদেশ লুটেপুটে খেতে চায় দু’জনেই।

অন্যদিকে আমেরিকাও এই অঞ্চল থেকে চীনতে তাড়াতে মরিয়া, সেজন্যই ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজি (আইপিএস) নামিয়েছে। তবে আমেরিকা যখন প্লান করেছে বাংলাদেশে ঢুকবে, তখন তারা ঢুকবেই, সেটা হার্ড সফ্ট যেপথেই হোক না কেনো। এটা করবেই করবে। আর যুক্তরাষ্ট্রের ভয়েই ভারত এবারে ফরেন সেক্রেটারি বিনয় কোয়েত্রাকে আর পাঠাতে পারছে না। রাখতে হচ্ছে তলে তলে সম্পর্ক। বাংলাদেশ থেকে চীন-ভারতের জয়েন্ট স্বার্থ দেখা বিনাভোটের সরকার আর থাকতে দিবে না যুক্তরাষ্ট্র, এখানে আসবে জনগনের শাসন।

Leave a Comment

You may also like

Critically acclaimed for the highest standards of professionalism, integrity, and ethical journalism. Ajkerkotha.com, a new-generation multimedia online news portal, disseminates round-the-clock news in Bangla from highly interactive platforms.

Contact us

Copyright 2021- Designed and Developed by Xendekweb