বাংলাদেশের রাজনীতি বাংলাদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নাই। নয়া পল্টন, মতিঝিল কিংবা বায়তুল মোকাররমে কয় লাখ লোক নিয়ে সমাবেশ করলো সেটা এখানে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। গত ২৩শে অক্টোবর, ২০২৩ তারিখে রাজধানীর হোটেল লেকশোরে বিএনপি একটা ইন্টারন্যাশনাল সেমিনার করে এবং সেখানে তারা তাদের ৩৬ দফা কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করে। এই ৩৬ দফার ভেতরে ৪ টি দফা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এখানেই লুকিয়ে আছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। দফাগুলো হলো ৯, ১১, ১৪ এবং ৩৫; এগুলো কেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ?
★ ৯ নং দফাতে বিএনপি বলেছে—
১। “ইন্দো—প্যাসিফিক বাণিজ্য রুটগুলো যাতে উন্মুক্ত এবং অ্যাক্সেসযোগ্য থাকে, তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ এই অঞ্চলের দেশগুলোর সাথে সম্পূর্ণভাবে সহযোগিতা করবে। আমরা (BNP) দক্ষিণ চীন সাগর, পূর্ব চীন সাগর, ভারত মহাসাগর এবং বঙ্গোপসাগরসহ সামুদ্রিক ডোমেনে নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি সমর্থন করবে।”
এটা এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ— দক্ষিণ চীন সাগর এবং পূর্ব চীন সাগরে ইউএসএর প্রবেশাধিকার থাকাটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে সবচেয়ে প্রয়োজনীয়। গত ৩ দিন আগেও সেখানে তাইওয়ান এবং ফিলিপাইনের পক্ষে মার্কিন যুদ্ধ জাহাজ আসার কথা ছিল৷ আর বাংলাদেশ এখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। কারণ চীনের সীমান্তের সাথে বাংলাদেশের দূরত্ব মাত্র ২০০ কিলোমিটার, আর এইসব এলাকা থেকে ১৫০০ কিলোমিটারেরও কম।
★১১নং দফাতে বিএনপি বলেছে—
“দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, জাপান, ভারত, কোরিয়া রিপাবলিক, অস্ট্রেলিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সাথে সামরিক-বেসামরিক সহযোগিতা জোরদার করা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইন্দো-প্যাসিফিকের বাণিজ্য পথগুলোকে উন্মুক্ত এবং নিরাপদ রাখতে এই দেশগুলো একসঙ্গে গভীর নিরাপত্তা সহযোগিতা গড়ে তুলতে পারে।”
এই গভীর নিরাপত্তা সহযোগিতা হলো-
এই অঞ্চলে চীনের ক্রমাবর্ধমান আধিপত্য বিস্তার রোধে কোয়াড এবং অন্যান্য সামরিক জোটে বাংলাদেশের উপস্থিতি। যেটা এই অঞ্চলে চীনের আধিপত্য কমানোর জন্যে কাজ করবে।
★১৪ নং দফা অনুযায়ী—
“বাংলাদেশকে তার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল পরিপূরণে আসিয়ান দেশগুলোর সাথে সহযোগিতা জোরদার করা উচিত।”
বাংলাদেশ আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সাথে বিশেষ সম্পর্কে যাবে যারা চীনের বিপরীতে ইউএসের সহযোগী।
★এই অঞ্চলে বাংলাদেশ শুধুমাত্র চীন এবং ভারতের ভেতর সীমাবদ্ধ না থেকে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে খেলোয়াড় হবে।
★ ৩৫ নং দফাতে বলা হয়েছে—
আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক প্রণীত বার্মা আইনকে (The Burma Act) স্বাগত জানাই এবং এর প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করি, যা মায়ানমারে গণতান্ত্রিক কর্মীদের এবং গণতন্ত্রের জন্য লড়াইরত প্রতিরোধ শক্তিকে সমর্থন করে।
★আমরা (BNP) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, কাতার, সৌদি আরব, তুর্কি, ওআইসি, ইইউ, জাতিসংঘের মতো গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এবং প্রতিবেশীদের মধ্যে আমাদের প্রধান অংশীদারদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন সমস্যা মোকাবেলার জন্য এই আইনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
★যুক্তরাষ্ট্র এই বছরই মায়ানমারে চীনপন্থী সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক সরকারকে সামরিক এবং আর্থিক সহায়তা করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমরা (BNP) তাতে সমর্থন ও সহায়তা করবে। এই সহায়তার ফলে রোহিঙ্গাদের পূনর্বাসন হবে। রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানও হবে।
★গত ২৮ অক্টোবরে নয়া পল্টনে বিএনপির উপর ক্রেকডাউন / হামলার পরে ৭টি দেশের যে বিবৃতি তার ভাষাগুলো মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করলেই খেলাটা কিছুটা বোধগম্য হবে।
★বাংলাদেশের বর্তমান চলমান রাজনীতির খেলাটা যতটা সহজ ভাবা হচ্ছে, আসলে ততটা সহজ অবস্থায় নেই। তাই একটু সময় নিচ্ছে।
★ সমাধান —
যেহেতু সমস্যাটা আন্তর্জাতিক এবং অনেক বড়। তাই এর সমাধানও হবে আন্তর্জাতিকভাবে এবং একই সাথে দেশীয় কায়দায়;
★ যা ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে দেশে ও বিদেশে;
★এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা এবং জনগনের বিজয় সুনিশ্চিত।