✍শামসুল আলম
২৯ অক্টোবর ২০১৮। বাংলাদেশের রাজনীতি জীবনে নানা ঘটনাবহুল দিন। এটা একদিকে বর্তমান সরকারের শেষ কার্য দিবস, কাল থেকে শুরু হবে নির্বাচনকালীন সরকার! একই দিনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে একটি দুর্নীতি মামলার বিতর্কিত রায়ে ৭ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়, অবশ্য আগের দিন রায়ের বিরবণ পত্রিকায় আগাম প্রকাশ হয়ে পড়ে। অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগ থেকে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচার চলবে; বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি আত্মপক্ষ সমর্থন করার সাংবিধানিক বিধানের পরিপন্থি। দু’দিন ধরে নৌমন্ত্রী শাজাহানের আজ্ঞাবহ পরিবহণ শ্রমিকরা ধর্মঘটের নামে জনগনের সাথে সন্ত্রাস করে রাস্তা দখলে রাখার একটা কারণ খুঁজে পাওয়া গেলো যে, বিএনপি যেনো রাজপথে না আসতে পারে। বিরোধী দলের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও ইভিএমের বিধান রেখে আরপিও পাশ করে সরকারের কেবিনেট! এরি মাঝখানে বিকালে ঘোষণা আসে, বিএনপি-নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজী হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আ’লীগ সরকার।
১. নির্বাচন তফসিল ঘোষণার আগে ঐক্যফ্রন্টের সাথে সংলাপের দাবী করে চিঠি দেয়ার পরে শীতল থাকার পরে হঠাৎ সরকারের ইতিবাচক সাড়া দেয়ায় নড়ে চড়ে বসেছ সবাই। এটাকে ‘রাজনীতির ইউ টার্ন’ হিসাবেও দেখছে অনেকে। শুধু সংলাপ নয়, ঐক্যফ্রন্টকে একেবারে নৈশভোজের দাওয়াত! বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরোধী দলের সাথে এক টেবিলে বসে খাওয়ার রেওয়াজটা উঠে গেছে অনেক দিন! সেখানে সরকারের এই অবস্থান বদলে সচিবালয় সহ সদ্ধিগ্ন মহলগুলো ভাবনায় পড়ে যায়! হঠাৎ কেনো এই সংলাপের ঘোষণা। তবে কি সরকারের সুমতি হয়েছে? তবে এটা কিন্তু শেখ হাসিনার নীতি ও চরিত্রের সাথে যায় না।
২. তাহলে কি প্রবল বিদেশী চাপে এই সংলাপ? এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। বোদ্ধারা সকলেই অবহিত আছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের নানা উদ্বেগের কথা। বিশেষ করে ৫ জানুয়ারীর ভোটারবিহীন নির্বাচনের ওপর ভর করে পূর্ন মেয়াদের একটি সরকার মেরে কেটে ক্ষমতায় থাকার পর ভুলের খাতায় অনেক কিছু জমা হয়েছে। এ অবস্খায়, প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো, বিশেষ করে উন্নয়ন পার্টনার যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সহ বেশিরভাগ বিদেশী বন্ধুরাই চায় বাংলাদেশে একটি জনগনের শাসন কায়েম হোক; আর যেনো পাঁচই জানুয়ারীর মত নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হয়। একটি অংশগ্রহনমূলক নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ প্রবল। বর্তমান সরকারের অন্যতম মিত্র ভারতও ২০১৪ সালের অবস্খান থেকে সরে এসে নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়, গ্রহনযোগ্য নির্বাচন দরকার ইত্যাদি কথা বলছে। ভূ-আঞ্চলিক রাজনীতিতে ভারতকে পাশে ঠেলে শেখ হাসিনার সরকার ও দল উদভ্রান্তের মত দৌড়াচ্ছে চীনের দিকে। নিঃসন্দেহে ভারতের জন্য এটি অসহণীয়। সার্বিক অবস্খা উত্তরপাড়া থেকেও সংলাপের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এহেন অবস্থায়, জাতীয় নির্বাচনের পূর্বক্ষণে নৈশভোজ-সংলাপে আদৌ কি ফল বয়ে আনবে, তা নিয়ে সবার কৌতুহল!
৩. তাহলে কি সংলাপ দেশে শান্তির সুবাতাস বয়ে আনবে? বিরোধী দলের ৭ দফা দাবী মেনে নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আ’লীগ সরকার একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে হাটছে? সরলভাবে তেমনটা আশা করা হবে নেহায়েত বোকামী! শেখ হাসিনা কখনই বিরোধীদের সম্পূর্ন দাবী মেনে এমন কোনো নির্বাচনের উদ্যোগ নিবে না, যাতে তিনি হেরে যাবেন। কেননা, মুখে যাই বলুন না কেনো, তিনি ভালো করেই জানেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জামানত বাজেয়াপ্তই তার দলে আশু নিয়তি। আর সেটা ঘোরাতেই যত প্রকারের নির্বাচন প্রকৌশল (election engineering), নিজ দলীয় লোক বেছে বেছে ভোট অফিসার নিয়োগ করা, বিরোধী দলের প্রতিবাদ সত্ত্বেও ইভিএম চেষ্টা, ক্ষমতার প্রধান দাবীদার বিএনপি প্রধানকে বিতর্কিত রায়ে একের পর এক সাজা প্রদান, বিরোধীদের গায়েবী মামলার দৌড়ের উপর রেখে নিজেরা নির্বাচনী কাজে নেমে পড়ার মত নির্লজ্জকর কাজে ব্যস্ত রয়েছে আ’লীগ।
৪. প্রশ্ন উঠতে পারে এই সংলাপের মানে কি? ঐক্যফ্রন্ট সংসদের বিরোধী দল নয়, বিগত সরকারও নয়, এমনকি এই ব্যানারে কখনও নির্বাচনে অংশও নেয়নি। তাহলে তাদের চিঠির বরাতে প্রধানমন্ত্রী হঠাৎ সংলাপে উদ্যোগী হলে কেনো? এখানেই রয়ে গেছে বিরাট উত্তর। বিএনপির নেতৃত্বে এই ঐক্যফ্রন্ট গঠনের মূলে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপিয়ানরা আছে, এটা প্রায় সর্বজনবিদিত। তাই তাদের অনুরোধ, উপরোধ, চাপ সবই কাজ করেছে এই সংলাপের সিদ্ধান্ত নিতে। তাছাড়া, গতকালই বামদলীয় জোট ঘোষণা করেছে, যেনো তেনো প্রকারের নির্বাচনে তারা অংশ নিবেনা। প্রতিবেশীর পিছুটানের ফলে ৫ জানুয়িারির মত বিনাভোটের নির্বাচন এবারে সম্ভব নয়। এ অবস্খায় চাহিত আলোচনা ছাড়া বা একটি নূন্যতম সমঝোতা ব্যতীত নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হলে দেশজুড়ে যে আন্দোলন হবে, তা গণঅভ্যুত্থাণের রূপ নিতে পারে, এটা বোধ করি ফ্রন্টের প্রস্তুতি থেকে সকলেই অনুধাবন করেছেন। আগামীকাল থেকে শেখ হাসিনার সরকার যখন নির্বাচনকালীন সরকার, তাই বিরোধী দলের কথা শুনতে তারা বাধ্য। আ’লীগ যদি সরকারে না থাকে, তবে বৈঠকে বসার কোনো প্রয়োজন হতো না, কিন্তু সরকারে থাকলে বৈঠক করতে হবে, শুনতে হবে কথা। নইলে নির্বাচন হবে কি করে, সংঘাত অনিবার্য!
৫. আরেকটি প্রশ্ন- সংলাপই যদি করবে, তাহলে এত তাড়াহুড়া করে আকতারুজ্জামানের ‘জাজমেন্ট মেশিন’ থেকে এতদ্রুত আউটপুট বের করে বিএনপি চেয়ারপার্সনকে ৭ বছর কারাদন্ড দেয়া হলো কেনো- যেখানে পুরো বিচার প্রকৃয়াটি প্রশ্নবিদ্ধ? সংবিধান লংঘন করে কেনো এই রায়? এটার অনেক উত্তর থাকতে পারে। কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে, শেখ হাসিনার মনখুশি রায় এটা। এটা দিয়ে তিনি খুশি। তিনি এখন খালেদা জিয়ার সাথে কোনো বৈঠকে বসতে রাজী নন, যদিও সেটাই ছিল তার নিস্ক্রমনের জন্য সহজ রাম্তা। অনেকেই মনে করেন, বেগম জিয়ার সাথে শেখ হাসিনার দ্বন্দ্ব যতটা না রাজনৈতিক, তারও চেয়ে বেশি ব্যক্তিগত! শেখ হাসিনার ক্ষোভ হলো, খালেদা জিয়া কেনো এত সুন্দর, কেনো এত লোক তাকে পছন্দ করে, কেনো তার এত বেশি ভোট! তাই তিনি খালেদা জিয়ার মত শক্তিশালি প্রতিপক্ষের সাথে বৈঠকে বসার চাইতে তাকে কারারুদ্ধ রাখতেই বেশি তৃপ্ত বোধ করছেন। এই রায়ের দ্বারা হাসিনা তার রাগ, জেদ, ক্রোধ ও সংকল্পের চুড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটালেন। ভবিষ্যতে যদি তিনি ক্ষমতায় ফেরত আসতে নাও পারেন, অন্তত খালেদা জিয়াকে দুর্নীতিবাজ বলে গালি দেয়ার পথ তৈরী করে নিলেন। তিনি ভালো করেই জানেন, সরকার পরিবর্তন হলে আজকের এই আপীল বিভাগই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এসব রায় ও সিদ্ধান্ত রিভিউ করে সব বাতিল করবেন দ্রুততম সময়ে। তাই এখন যা কিছু পারা যায়, নিজের হাতেই করে নিয়ে তৃপ্ত হতে চান তিনি!
৬. এটা কি এমন হতে পারে যে, হাসিনা দীর্ঘকালের অবৈধ সরকারের দুর্নাম ঘুচাতে নিজকে ‘হঠাৎ গণতন্ত্রী’ প্রদর্শনের জন্য সংণলাপের এই দৃশ্য মঞ্চায়ন করলেন? কিংবা নিজেকে মহান দেখাতে? বিগত নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করে শেখ হাসিনা নিজেই গণভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ডিনারে, সংলাপে, এবং নির্বাচনকালীন সরকারে অংশ নিতে। কিন্তু এ টেলিফোন কলের আগেই তিনি ছ’শ কোটি টাকা ব্যয় করে নিশ্চিত করেছিলেন, বেগম জিয়া যেনো সংলাপ প্রত্যাখ্যান করেন (এর দলিল হয়ত দেয়া সম্ভব নয়, কিন্তু জীবন্ত মানুষ সাক্ষী আছে)! তার মানে, ওটা ছিল লোক দেখানো সংলাপের ডাক। এবারেও তেমনটা না ঘটলেও যাতে সংলাপের পূর্ণ সুবিধা বিরোধীরা না পায়, সে চেষ্টা তার অবশ্যই থাকবে!
৭. তাহলে সংলাপের ফলাফলটা কি?
ক) সংলাপ দৃশ্যমাণ শোভন হবে। শেখ হাসিনা হয়ত ফ্রন্টের আংশিক কিছু দাবী দাওয়া মেনে নেয়ার কথা বলে ক্যামোফ্লেজ তৈরী করবেন, যাতে করে ফ্রন্টের মধ্যে বিভেদ লাগে বা ভাঙনের মুখে পড়ে। হয়ত বলবেন, ‘সংবিধান মোতাবেক আমি সরকারে থাকব, পদত্যাগ করার কোনো নিয়ম নাই, সংসদ চালু নাই তাই ভাঙার কোনো দরকার নাই, সংবিধান মোতাবেক আমার অন্তবর্তী কেবিনেটে আপনারা ৫জন মন্ত্রী দিতে পারেন, সে জন্যই কেবিনেট ভাঙ্গিনি (১০% কোটায় আসুন) “ এতে করে ফ্রন্টের মধ্যে কলহ লাগতে পারে।
খ) বলবে, বাকী সব দাবী এভাবে মানব- নির্বাচন কমিশন পূর্নগঠন করতে গেলে নির্বাচন পিছিয়ে যেতে পারে। তাতে রাজী থাকলে চেষ্টা করা যাবে, নাম দেন। তখন অন্য রাজনৈতিক দল বা জোটের সাথে বৈঠক করার সুযোগ তৈরি হবে, আর এতে নির্বাচন ঝুলে যাবে। যাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী অভিযোগ আছে, তাদের ছাড়া বাকী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মুক্তি দেয়া হবে। গণতন্ত্রের স্বার্থে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হবে, তবে আইনি প্রকৃয়া মেনে। এতে করে সময় লাগবে। যেভাবে রায়গুলো আছে, দেখা গেলো এমন সময়ে বেগম জিয়া ছাড়া পেলেন যে, তিনি নির্বাচনে অংশ নিতেও পারলেন না, বা প্রচারণাতেও সামিল হতে পারনে না। এভাকে প্রথম দফা মানার গেম চলতে পারে।
খ) ইভিএম সিস্টেমে নির্বাচন করার মত কোনো প্রস্তুতি ও ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের না থাকার পরও কেবিনেটে আজ তা পাশ করে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, নির্বাচন কমিশনকে ইনাম হিসাবে কয়েক হাজার কোটি টাকার বিল পাশ করার সুযোগ দিলো সরকার। ইভিএম আইন পাশ করতে চাইলে বিদায়ী (বিনাভোটের) সংসদেই পাশ করতে পারত। এত দেরী করে সংসদশূন্য অবস্থায় কেনো? কিন্তু সেটা যখন করেনি, এখন করতে হলে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ দিয়ে করতে হবে, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। তাহলে এই ইভিএম বিতর্ক জিইয়ে রাখলো কি বিরোধীদের টেনশন বাড়ানোর জন্য? এখন সংলাপের সময় হয়ত বলবে- ইভিএমের দাবীও মেনে নিলাম। যান আরেক দফা হলো তো!
গ) অন্যান্য দাবীর মধ্যে সেনাবাহিনী নামানো প্রসঙ্গে বলবে রাজী, তবে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে থাকবে, সাথে সিভিল ম্যাজিষ্ট্রেট থাকবে! বলবে সভাসমাবেশের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা থাকবে না। বলবে, কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের আন্দোলন, সাংবাদিকদের আন্দোলনে যারা আছে, সবাইকে মুক্তি দেয়া হলো। দেশী বিদেশী পর্যবেক্ষকেও রাজী। কারও কোনো রাজনৈতিক মামলা থাকলে নির্বাচনকালে স্থগিত থাকবে। কিন্তু বাস্তবে প্রায় সকলের নামে ফৌজদারী অপরাধের মামলা। পুলিশ যেভাবে মামলা সাজায় তাতে রাজনৈতিক মামলা প্রমান করা বেশ জটিল।
বলবে, তাহলে ৭ দফা দাবীর প্রায় সবই মানা হলো, এবার ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে আসুন। এ নিয়ে বাগড়া দিতে যাবে কে? কেউ অবশ্য বলছেন, হাসিনা জানে, তাকে বিদায় নিতে হবে, এটা নিশ্চিত। এখন তিনি চান সেইফ এগ্জিট। এ নিয়ে বিএনপির ওপরে তার আস্থা নেই, আস্খা আছে ড. কামালে। ব্যারিস্টার মইনুলে সমস্যা আছে, তাই জেলে রাখা হলো। জাফরউল্লাহ আশ্বাস দিয়েছেন প্যাসেজ দিবেন, তাই তাকে বাইরে রাখা হয়েছে। কারো কারো মতে, হাসিনা সময় ক্ষেপণ করছেন। তবে কি সংলাপের নামে নিরাপদ প্রস্থানের পথ পরিস্কার করা হলো?
অনেকের মনে প্রশ্ন উঠতে পারে, তবে কি ফ্রন্ট-রাজনীতি করতে গিয়ে বিএনপি ফাঁদে পড়লো? তাছাড়া ফ্রন্ট নিয়ে আগানোর কুফলে কি ২০ দলীয় জোট অস্তিত্বের সংকটে পড়বে? এ অবস্থায় কি নির্বাচন হবে, নাকি ফ্রন্ট বয়কট করবে? নাকি নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট ভেঙে যাবে? এসব প্রশ্নের জবাব এবং উপরে লিখিত সম্ভাবনাগুলো সবই ঘটনাত্তোর পরিস্কার হবে। সংলাপ শেষে আগামী শুক্রবার নাগাদ বোঝা যাবে এর ফলাফল, তত দিনেও ১০ দিনের আল্টিমেটামের কয়েকদিন বাকী থাকবে। তখন বলা যাবে ফ্রন্ট নির্বাচনে যাচ্ছে কি না। এর আগে যা কিছু বলা, সবাই আন্দাজ এবং বিশ্লেষণ মাত্র! তবে আপাতদৃষ্টে যা মনে হচ্ছে, শেখ হাসিনা বিদেশী চাপে পড়ে, উত্তর পাড়ার মতামতে, এবং জনগণের কাছে নিজের ‘চেষ্টার ত্রুটি করিনি’ বোঝাতেই এই সংলাপের হঠাৎ আয়োজন। শেষ পর্যন্ত যদি এই সংলাপের পথ ধরে নির্বাচনে যায়ও ফ্রন্ট তবে দেখা যাবে- শেখ হাসিনা সরকার প্রধান হয়ে আছেন, তার সজ্জিত প্রশাসন ও পুলিশ সবাই কর্মরত, রিটারর্নিং অফিসার ও পোলিং-প্রিজাইডিং অফিসার হিসাবে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ করা ব্যক্তিরা কাজ করছে, ইলেকশন কমিশনার ২/১টা বা পুরোটাই বদলে দেয়া হলো কিন্তু তার সচিবালয় আনটাছ রাখা হলো (বিশেষ করে সচিব হেলালউদ্দীন)! এমতাবস্থায়, এইরূপ পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচনী প্রশাসন দিয়ে আর যাই হোক, সুষ্ঠু ভোট গ্রহন ও ফলাফল প্রকাশ অসম্ভব। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও প্রশাসন নিরপেক্ষকরণ বলতে যা বোঝায়, তা করতে হলে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরাতেই হবে। আর সেটা তো তিনি সংলাপের ভেতর দিয়ে রাজী হবেন না। তা অবশ্য কেউ হয়ও না। তার জন্য দরকার হবে – রাজপথের আন্দোলন ও গণবিল্পব। বর্তমানে বিরোধী দল, তথা ঐক্যফ্রন্টের সেই প্রস্তুতি থাকলেও ডিনার-সংলাপে হয়ত সেটা কিছুটা পিছিয়ে যাবে, বিশেষ করে ২ তারিখের ঢাকায় জমায়েত। তবে ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়েও রাস্তায় নেতাকর্মী নামিয়ে যেকোনো সময় নির্বাচন বয়কট করে অলআউট আন্দোলনে যেতে পারবে। এদেশের ইতিহাস যা বলে, তাতে নাগরিকের ভোটের অধিকার রাজপথেই অর্জিত হবে। বেগম জিয়ার সাথে মামলাবাজি করতে গিয়ে শেখ হাসিনা তার হাতের কার্ড সব খেলে ফেলছেন। আর এতে করেই জনতার বিজয়ের আশা জাগছে।