আইন মন্ত্রণালয় নিরবে নিভৃতে দখলে নিয়েছে জামায়াত। বিনাভোটে এমপি মন্ত্রী হওয়ার আগে একদিনও আওয়ামীলীগ রাজনীতি করেননি তবু ২ টার্ম আইনমন্ত্রী আনিছুল হক। রাজনীতিতে পোড় খাননি তাই নিজের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে আওয়ামীলীগকে ডুবিয়ে এখন তার একমাত্র অর্জন হলো ব্যক্তিগত ভাবে টাকার খনি প্রাপ্তি।
মন্ত্রী হওয়ার আগে আনিছুল হকের কোন ব্যবসা ছিলনা। শুধু সম্বল ছিল আইন পেশা। তাই নিয়ে মন্ত্রীর সচ্ছল জীবনে চলাবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মন্ত্রীর মুখোশের আড়ালে ছিল দূর্নীতির সুউচ্চ বাসনা। সেই বাসনা মেটাতে দরকার ছিল মোসাহেব মার্কা সচিব। দুলাল সচিব থাকতে সেই বাসনা তেমন পুরণ হয়নি, কারন পিস্তল দুলাল নিজেই ছিল গুন্ডা প্রকৃতির, মন্ত্রী তার সাথে তেমন সুবিধা করতে পারেনি।
দুলালের বিদায়ে মন্ত্রী দুলালের কারনে সৃষ্ট সমস্যাকে সমাধানে সচেষ্ট হলেন মন্ত্রী। ছাত্র জীবনে ছাত্রলীগ করেছে এমন কেউ সচিব হলে রাজনৈতিক গরমে মন্ত্রীর কাজে বাগড়া দিতে পারে, তাই নিজে তদবির শুরু করেন অনুগত সচিব পেতে। এক দুলালতো মন্ত্রীকে বহু ঘোল খাইয়েছিল, তাই অনুগত মোসাহেব নিলেন নিজের এলাকার গোলাম সারোয়ারকে। গোলাম তার নামের প্রতি সুবিচার করলেন। মন্ত্রীর পাকা গোলাম হয়ে কাটিয়ে দিলেন কয়েক বছর। মন্ত্রীর গোলা ভরে গেলে হাজার হাজার কোটি টাকায়। এত টাকা গোডাউনে রেখেও কুল কিনারা হবে না, আর অন্যদের ব্যাংকে টাকা রাখাও নিরাপদ না। তাই স্বাধীনতার পর একমাত্র আইনমন্ত্রী যার টাকার খনি গুদামজাত করতে তৈরী করলেন সিটিজেন ব্যাংক।
আমেরিকায় প্রবাসী মন্ত্রীর মৃত ভাইর কাছে জমানো শত শত কোটি ডলারের কি হবে তাই নিয়ে মন্ত্রী আশংকায়। একাধিক দেশে ভিসা হলো না। কবে মাথার উপর মার্কিন স্যাংশন চেপে যায় এই ভয়ে আতংকিত মন্ত্রী। মন্ত্রী বাহাদুর কালে ভাদ্রে আসেন মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রীর কক্ষ মাসের অধিকাংশ দিনই বন্ধ থাকে। শূন্য চেয়ার, বন্ধ দরজা, ধুলো জমা টেবিল হলো বাংলাদেশের আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী পদের বাস্তবতা। মাসের মধ্যে ১০ দিনও মন্ত্রীকে মন্ত্রণালয়ে খুঁজে পাওয়া যায়না, ফাইল জমে জমে স্তুপ হয়। বিচার প্রশাসনের অবস্থা প্রায় মুখ থুবড়ে পড়া লক্কর ঝক্কর গাড়ীর মতো কখনো চলে কখনো বন্ধ হয়। মাঝে মাঝে মিডিয়ার সামনে মুখ দেখিয়ে মন্ত্রী নিজের অস্তিত্ব জানান দেন হালকা তোতলামী আর আইনের ভুলভাল ব্যাখ্যা মিশ্রিত করে। যদিও তার থেকে কখনো সঠিক ও সম্পূর্ণ কিছু পাওয়া যায়নি কখনো। আমরা দেখবো, দেখে বলতে হবে, পরে জানাবো অধিকাংশ সময়ই এই মার্কা দৌড়ত্ব তার আইনী ব্যাখ্যা ও যোগ্যতা।
তবে মন্ত্রীর আসল কেরামতি দেখিয়েছেন গোলাম বাছাইয়ে। চরম অনুগত গোলাম কখনোই কোন কাজে বাগড়া দেয়নি। টাকার খনি রেজিষ্ট্রেশন ডিপার্টমেন্ট, বড় মামলার তদবির বানিজ্য, গণহারে কসবার নিয়োগ সহ লুটপাটের বড় বড় খাত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা কালেকশন করে তা জায়গায় জায়গায় ডিপোজিট করতে সফল হয়েছেন গোলাম ও তার সঙ্গীয় দক্ষ টিম। কম ভাগ নিয়েই সন্তুষ্ট থেকেছে গোলাম।
অতীতে এমন একটি দক্ষ টিমের অভাবে চুরি করা শুরু করতেই ধরা খেয়েছিলেন প্রয়াত সুরঞ্জিত বাবু, আর হয়ে গিয়েছিলেন কালো বিড়াল! নন পলিটিক্যাল মন্ত্রীর আমলে তার এলাকার কয়েকটা তার বাড়ীতে ও লোকজনের কামলা দেয়া হাইব্রিড ছাত্রলীগ ব্যতীত গোটা বাংলাদেশের কোন ছাত্রলীগ, যুবলীগ করা লোকের চাকুরী হয়নি তার মন্ত্রণালয়ে। বরং আওয়ামীলীগ করার চেয়ে বহুগুণ বেশী লোক চাকুরী পেয়েছে শিবির করা। হেরেছে আওয়ামীলীগ জিতেছে মন্ত্রী। নিশ্চিত ভাবেই মন্ত্রী সেরাদের সেরা। এরই ধারাবাহিকতায় এবারে ইউুনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তার এলাকা থেকে ‘নৌকা’ উৎখাত করেছেন। তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে বক্তব্যে বলেছেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে কাউকে দলীয় নৌকা প্রতীক দেওয়া হবে না’।
মন্ত্রীর চয়েজে গোলাম সচিব হওয়ার আগে গোটা কর্ম জীবনে একদিনও এমন একটি কাজ করেনি যা আওয়ামীলীগের কারো উপকার হয়েছে। গোলাম অত্যন্ত দহ্মতার সাথে মন্ত্রীর গোলামী যেমন করেছেন তেমনি তার মাদ্রাসায় পড়া ছাত্রজীবনে করা প্রিয় সংগঠন ছাত্র শিবিরেরও সমান গোলামী চুপেচাপে সফলতার সাথে করেছেন। ছাত্র জীবনে ছাত্রলীগ করা কাউকে ঘেষতে দেয়নি তার চারিপাশে। শিবির করা বিশ্বস্ত লোক পিএস বানিয়ে, গুরুত্বপূর্ণ সিএমএম পদে বসিয়ে শিবিরের লোক দিয়ে ধীরে ধীরে দল ভারী করেছেন। মন্ত্রণালয়ের সেকশনগুলোতে বেছে বেছে জমা করেছেন বিশ্বস্ত শিবির চক্র।
পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদদের থেকে রাজনীতি যখন চাটুকারিতা, মালিশ যোগ্যতার দিকে চলে যায়, তখন মন্ত্রীত্বের গুণগত মান তলানীর দিকে যায়। চাটুকারিতায় প্রাপ্ত মন্ত্রী তার চাকর নির্ধারন করে চাটুকারিতা যোগ্যতায়। আবার বড় চাকর তার ছোট ছোট চাকর নির্ধারন করে চাটুকারিতা যোগ্যতায়। এভাবেই রাজনৈতিক যোগ্যতা বিপন্ন হয় চাটুকারিতার চক্রে। আইন মন্ত্রণালয়ে দিব্বি আছে আওয়ামী জোরে জোরে জয় বাংলার হাকডাক চলে। তবে বাস্তবে কোন মারামারি কাটাকাটি ছাড়াই সুকৌশলে, কেবলমাত্র বুদ্ধির জোরে আওয়ামীলীগের পোষাক জড়িয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের দখল নিয়েছে শিবিরলীগ।