ক্ষমতা ছাড়ার আগে আওয়ামী লীগ সরকার তড়িঘড়ি করে ১৮০০ সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগ করতে চেয়েছিল শেখ হাসিনার সরকার। সিস্টেম মেনে এসআই নিয়োগ করতে ২ বছর সময় লাগে, সেখানে সরকার বিদায়ের আগে তড়িঘড়ি করে ৬ মাসের মধ্যে এই নিয়োগ দিয়েছে পুলিশ হেড-কোয়ার্টার। অতি দ্রুততার সাথে লিখিত পরীক্ষা নেয়া হয়েছে, আজকে রেজাল্ট দিয়েছে ৯২১ জনের। দলীয়ভাবে প্রার্থী বাছাই করতে লিখিত পরীক্ষাতেই প্রশ্ন সেভাবে করা হয়েছে। তারপরে রাজনৈতিক পরিচয় যাচাই করে কেবল সরকার দলের বা তাদের সমর্থক বাছাই করে ফল প্রকাশ করা হয়েছে। চুক্তিতে টাকা নেয়া হয়েছে ২০ থেকে ৪০ লাখ করে। আগে যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, চিটাগাং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুলিশ ক্যাডেটে ঢুকত, সেখানে এখনকার চয়েজ হলো জেলার ও মফস্বলের কলেজ পাশ। এতে টাকার সরবরাহ ভালো হয়। এই নিয়োগ সহজে দেয়ার জন্য মৌখিক পরীক্ষার নম্বর ২০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ করা হয়েছিল যাতে করে ইচ্ছামত পাশ-ফেল করানো যায়।
এই নিয়োগ কমিটির প্রধান করা হয়েছে ১৫তম বিসিএসের অফিসার অতিরিক্ত আইজিপি ব্যারিস্টার হারুনুর রশিদকে। আর দাপ্তরিক সব লজিস্টিক যোগান দিচ্ছে ১৮ বিসিএসের ডিআইজি (এইচআরএম) কাজী জিয়াউদ্দিন, যিনি বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের আপন চাচাতো ভাই। নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব হিসাবে কাজ করছেন মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন এআইজি, ২৫ বিসিএস, বাড়ি চিটাগাঙ। আমজাদের রাজনীতির পরিচয় ছাত্রজীবনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি ছিলেন। আমজাদ জননিরাপত্তা বিভাগের ভূতপূর্ব সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামালউদ্দিনের নিকটাত্মীয়। যার মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীর সকল পদের পোস্টিং-পদোন্নতি-নিয়োগ বাণিজ্যের কোটি কোটি টাকা গ্রহণ করতেন সচিব মোস্তফা। এই আমজাদ মুলত সচিবের ক্যাশিয়ার ছিলেন। কেবল সচিব নয়, তার পত্নীও টাকা নিতেন, যার বিনিময়ে তার প্রার্থীও পদোন্নতিসহ জেলায় পোস্টিং, ডিআইজি হিসেবে পোস্টিং,পদোন্নতি এবং কনস্টেবল রিক্রুটমেন্ট, সাব-ইন্সপেক্টর রিক্রুটমেন্ট এবং ওসি পোস্টিংও হতো। আমজাদ শিবিরের সভাপতি ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়েও বহাল তবিয়তে এসব কাজ করেছন, কারণ তার মাথার ওপরে ছিল সিনিয়র সচিবের হাত। সচিব তখন পুলিশের যাবতীয় কর্মকাণ্ডে এমনভাবে জড়িয়ে ছিলেন যে তাকে সবাই পুলিশ ক্যাডারের অফিসার হিসেবে ভাবতে শিখেছিল। তৎকালীন জননিরাপত্তা সচিব এভাবে ক্ষমতা খাটাতে পারত এই কারণে যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নিজে দীর্ঘকাল পুলিশ বিভাগে একজন সামান্য ঠিকাদার ছিলেন, এই মাইন্ডসেটেই তাকে দেখত সচিব ও পুলিশ কর্তারা! এই ঠিকাদার মন্ত্রী স্বরাষ্ট্র সচিবকে কাজেকর্মে ব্ল্যাংক চেক দিয়েছিলেন, আর তাতে যাকে যেভাবে মনে হয়েছে, চাহিদা অনুযায়ী অপব্যবহার করেছেন সচিব মোস্তফা কামাল।
এর আগে এবছরে ৭৬১ জন সাব-ইন্সপেক্টর পাসিং আউট হয়ে গেছে আজ, সার্জেন্ট ট্রেনিং চলছে ৭২০। এক বছরের মধ্যে ৩টি ব্যাচ নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে সরকারের শেষ সময়ে এসে এই চাকরি প্রার্থীরা টাকা দিয়ে চাকরি না পেয়ে হোম মিনিস্টার সহ সবার হাটে হাড়ি ভেংগে দেবার জন্য একাট্টা হয়েছে। ইতোমধ্যেই তারা ঘুসের টাকা ফেরত নেয়ার জন্য যোগাযোগ করছেন।
উল্লেখ্য আজ শুক্রবার বন্ধের দিন হওয়া সত্ত্বেও এসআই নিয়োগের ফলাফল এআইজি আমজাদ হোসেনের স্বাক্ষরে প্রকাশিত হয়েছে।