আমেরিকায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের পরিচিত এক নাম পিপল এন্ড টেক, যার কর্ণধার হলেন আবুবকর হানিপ! আইটি প্রশিক্ষণ এবং জব প্লেসমেন্টের জন্য এই প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপণ থাকলেও মূলত শত শত প্রশিক্ষণার্থীকে পথে বসিয়ে দিয়েছে এই পিপল এন্ড টেক! বাংলাদেশের শেখ হাসিনার বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের এই বাংলাদেশী কারিগরি প্রতিষ্ঠান পিপল এন টেকের কর্ণধার আবুবকর হানিপের বিশেষ সম্পর্ক। কেউ কেউ বলেন তিনি প্রতিষ্ঠানটির এডভাইজার, কেউ বলেন প্রমোটার, কেউবা আবার বলেন এডভারটাইজার হিসাবে কাজ করছেন। গত নয় মাসেই মোমেন সাহেব দু’বার হানিপের প্রতিষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে বানিজ্যিক কার্যক্রমে অংশ নেন। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাতিসংঘ অধিবেশনে এসে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর যেখানে সময় পাওয়ার কথা নয়, তার মাঝখানে মোমেন সাহেব পিপল এন টেকে অনুষ্ঠানও করে ফেলেছেন। পিপল এন টেক দাবী করে তারা ১৪ বছরে ৫ হাজার বাংলাদেশী যুবক যুবতীকে যুক্তরাষ্ট্রের মার্কেটে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। আইসিটি খাতে বিশেষ করে ‘সফটঅয়ার টেস্টিং’ কাজ প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশী অভিবাসীরা খুব সহজেই উচ্চ বেতনে কাজ করতে পারবেন, এমন লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে ও প্রচারণা চালিয়ে কাস্টমার ধরা হয়। গড়ে জনপ্রতি ৪০০০ থেকে ৫০০০ ডলারের বিনিময়ে ৪/৫ মাসের একটা ট্রেনিংয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়। জব প্লেসমেন্টের নাম ভুয়া প্রচারণা হানিপ সাহেব এবং তার প্রতিষ্ঠান দাবী করে, ট্রেনিং শেষেই তারা জব প্লেসমেন্ট করে। তবে রয়েছে তাদের অদ্ভুদ জালিয়াতি টেকনিক। আমেরিকার জব মার্কেটে তারা কর্মী নিয়োগে সুপারিশ করে ভুয়া অভিজ্ঞতার রিজুমি (Resume) দিয়ে। বেশ কয়েক বছরের জব করেছে প্রার্থী, এমন তথ্যাবলী সরবরাহ করে পিপল এন টেক। তবে প্রতিষ্ঠানটি দোষের মধ্যে যেতে চায় না। সেজন্য প্রার্থীকে নিজেরই রিজুমি আপলোড করতে হয়, যাতে পরে ধরা পড়লে পিপল টেক অস্বীকার করে, দোষ হয় প্রার্থীর। এই ফেইক বা ভুয়া রিজুমির বিষয়টি প্রশিক্ষনার্থীদের জানানো হয় প্রশিক্ষণের শেষ পর্যায়ে এসে যখন তারা চার/পাঁচ হাজার ডলারের টিউশন ফি পরিশোধ করে ফেলে এবং চার থেকে ছয় মাস পর্যন্ত সময় ব্যয় করে ফেলে। এমন পরিস্থিতিতে চাকুরীপ্রার্থী ছাত্রছাত্রীরা নিরুপায় হয়ে আবু হানিপের নির্দেশমত ফেইক রিজুমি নিয়ে চাকুরির ইন্টারভিউ ও চাকুরী লাভের জন্য বিভিন্ন জব সাইটে আবেদন করতে বাধ্য হয়। ইন্টারভিউতে যারা কৃতকার্য হয় তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড চেকের জন্য পিপল এন টেকের কন্টাক্ট নাম্বার রিজুমিতে উল্লেখ করা থাকে। চাকুরীদাতা কোম্পানিগুলো চাকুরীতে নিয়োগ দেয়ার পুর্বে প্রার্থীর ৪/৫/৬ বছরের অভিজ্ঞতার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য পিপল এন টেকে যোগাযোগ করলে পিপল এন টেক থেকে সেই ভুয়া বা ফেইক অভিজ্ঞতার বিষয়টিকে সত্য বলে সত্যায়ন করে থাকে। ওরা এ পর্যন্ত যত লোকের জবের ব্যবস্খা করছে, তার মধ্যে ৯৫% ঝরে পড়েছে বাস্তব ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতার সাথে রিজুমিতে উল্লেখ করা অভিজ্ঞতার আকাশ পাতাল পার্থক্যের বিষয়টি ধরা পড়ার কারনে। মিষ্টি কথায় ভুলে মানুষ এমন এক ফাঁদের মধ্যে পা দেয়, পরে যেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনা। পিপল এন টেক থেকে ট্রেনিং নেয়া প্রচুর বেকার তো আছেই, ১০০০ খেকে ১২০০ লোক আছে, যারা কাজ না পেয়ে ট্যাক্সি চালিয়ে, গ্রোসারী সপে কাজ করে জীবন নির্বাহ করছে। পিপল এন টেকের ওয়েব সাইটে বহু ভুক্তভোগিরা তাদের বিরূপ মন্তব্য ও ক্ষোভের কথা প্রকাশ করলেও আবু হানিপ সেসব তাৎক্ষণিকভাবে মুছে দেয়ার জন্য লোক নিয়োগ করে রেখেছেন। ফলে ভুক্তভোগিদের কথা ধামাচাপা পড়ে থাকে। একে আবদুল মোমেন সাহেব পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার আগে নিউইয়র্কের জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসাবে টানা ৬ বছর দায়িত্ব পালন করেন। এসময়ে আবুবকর হানিফের সাথে তার পরিচয় ঘটে। ঐসময় দামী দামী উপঢৌকন, নগদ খাম, ও সুযোগ সুবিধার বিনিময়ে মোমেন সাহেবকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আমন্ত্রণ করেন হানিপ সাহেব, এবং সেগুলো মিডিয়াতে প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়। ফলে পিপল এন টেকের খবর বাংলাদেশী কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়ে। হানিপের ব্যবসা বাড়ে, এমনকি বাংলাদেশে পর্যন্ত এর শাখা খোলা হয়েছে। তবে মোমেন সাহেব যে হানিপের সাথে বড় ধরণের কোনো আর্থিক সংশ্লেষে জড়িয়ে আছেন, তা তাদের কর্মকান্ড দেখলেই বুঝা যায়। এমনকি ভুক্তভোগী ছাত্র ছাত্রীরা প্রতিবাদমুখর হওয়ার চেষ্টা করলে আবু হানিপ পরোক্ষভাবে বিভিন্ন কৌশলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সহ আওয়ামিলীগের বিভিন্ন হোমরা চোমরার সাথে তার দহরম মহরমের বিষয়টির দিকে ইংগিত করে তাদের এক প্রকার পরোক্ষ হুমকি দিয়ে থাকেন। হানিপ-মোমেন চক্রের এহেন লোকঠকানো, প্রতারণা, ও মানুষেকে রাস্তায় বসিয়ে দেয়ার জালিয়াতি ব্যবসা সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে বিচারের আওতায় আনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের কাছে ভুক্তভোগিদের দাবী।
জালিয়াত ও প্রতারক প্রতিষ্ঠানের সাথে হাসিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের কিসের ব্যবসা?
previous post