28, April, 2024
Home » ‘হিজড়া হাবিব’: পুলিশের অঘোষিত মহা ক্ষমতাধর এক নীতিনির্ধারক!

‘হিজড়া হাবিব’: পুলিশের অঘোষিত মহা ক্ষমতাধর এক নীতিনির্ধারক!

102 views


ডিআইজি পদে থাকতেই হাবিব নিজেকে আইজির চেয়েও বেশী শক্তিশালী হিসাবে জাহির করত! বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে সম্ভবত এর চেয়ে বেশি ক্ষমতা খাটানো, দল পাকানো, এবং দুর্নীতিতে নিমজ্জিত অফিসার দ্বিতীয়টি পাওয়া কঠিন।  হাবিবুর রহমান, বর্তমানে অতিরিক্ত আইজিপি। গুম-খুনের সরকারের সকল ধরণের সার্ভিস দেয়ার বিনিময়ে তিনি লাভ করেছেন বিপিএম(বার), পিপিএম(বার)। বাড়ি গোপালগঞ্জ হওয়ার সুবাদে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যেমন ঘনিষ্ট ও বিশ্বস্ত, তেমনি অনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং আর্থিক লেনদেনের যোগ্যতায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালেরও খুব কাছের, ফলে ডিপার্টমেন্টে অস্বাভাবিক ক্ষমতা খাটিয়ে চলছে, তিনি বাংলাদেশ পুলিশে যোগদানকারী ১৭তম বিসিএসের অফিসার। তবে পুলিশ বাহিনীতে কার কথা থাকবে তা নিয়ে হাবিবের সাথে ১৫ ব্যাচের মনিরুলের আছে বিরাট গুতোগুতি।

ছাত্র হিসেবে ব্যাক-বেঞ্চার হাবিব তার প্রথম চাকুরী জীবন শুরু করেন বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)-তে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী হিসাবে। পরিচালক মোহাম্মদ বশির উদ্দিনের অধীনে পিএ হিসাবে কাজ করতো। বশিরউদ্দিনের কাছেই হাবিবের দু’নম্বরীর হাতেখড়ি। ১৩তম বিসিএস পরবর্তী ব্যাচগুলিতে নানা রকম জালজালিয়াতি শুরু হয়, এবং সাথে কমিশনের অফিসারদের সাথে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীরাও জড়িত। পরীক্ষার খাতা পাল্টানো, প্রশ্ন ফাঁস, ফেলকে পাশ করানো ইত্যাদি নানা রকম দু’নম্বরী কারবার চলে। হাবিব ১৯৯৮ সালে পিএসসির একজন মেম্বার সিরাজউদ্দিনের সহায়তায় ১৭তম বিসিএস পরীক্ষায় খাতার টপশিট বদল করে নিজে এবং তার সহযোগি একদল বাতেন, মফিজ, হাফিজ, আনোয়ার, খন্দকার মহিদউদ্দিন, শেখ নাজমুল, সার্জেন্ট মিজানসহ বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়ে ফল প্রকাশ করতে সমর্থ হন। পিএসসির একজন কর্মকর্তার মতে এই সংখ্যা ৩০ এর কম নয়। চাকরিতে যোগদানের পরে পুলিশ অফিসারদের ট্রেনিং চলাকালে সেই পিএসসি মেম্বার টাকা তুলতে সারদা ট্রেনিং সেন্টারে পর্যন্ত গিয়েছিলেন। শুরুতেই ফল জালিয়াতির এই ম্যানেজমেন্টের কারণে উপরোক্ত কর্মকর্তাগণ হাবিবকে চাকরির প্রথম থেকে বিসিএস ১৭ ব্যাচে পুলিশের নেতা হিসেবে মান্য করেন। পরবর্তীতে হাবিব নিজের পায়ের তলা শক্ত হলে তার প্রাক্তন বস বসিরউদ্দিনের পিছে লাগেন, এবং ঘোট পাকিয়ে তাকে কষ্টদায়ক স্থানে পোস্টিং করান, এমনকি তাকে দীর্ঘদিন পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করে রাখে, সর্বশেষে চাকরিচ্যুতি ঘটে বশিরের, অভিযোগ দুর্নীতির।

২০০০ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে হাবিব পুলিশে চাকুরিজীবন শুরু ডিএমপিতে সহকারি কমিশনার হিসেবে। এরপরে ভোলা জেলার লালমোহন সার্কেলে পোস্টিং থাকাকালে তিনি এবং শেখ নাজমুল আলম তৎকালীন এমপি ও আওয়ামীলীগের মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের দলদাস হিসেবে কাজ করতেন। বিএনপি নেতাকর্মী এবং সমর্থকদের নানা অজুহাতে হয়রানি ও মিথ্যা মামলায় আটকে দিতেন। রাজনৈতিক মামলার আসামিদের নানা অজুহাতে রিমান্ডে এনে নিজেই মারধর করতেন হাবিব। ২০০১ সালে আওয়ামী সরকারের শেষ বছরে তার অত্যাচারের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। ঐসময় তার সার্কেল অফিসে একজন বিএনপির কর্মীকে পিটিয়ে তিনি হত্যা করেন। ২০০২ সালে তার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলার দায়ের হয়। তিনি বিচারপতি শামসুদ্দিন (কালা মানিক)-এর সহায়তায় উক্ত মামলা থেকে নিজেকে খালাস করিয়ে নেন। এই পিরিয়ডে তিনি বিচারপতি ওবায়দুল হক শাহীন, শিক্ষা সচিব এন আই খান, সিনিয়র সহকারী সচিব পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদ হোসেন, সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর পিএস এবং মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, বাকশাল আমলের সাবেক এসপি মাহবুবসহ ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র’এর ঘনিষ্ট আমলাদের সাথে দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপন করেন।

২০০২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত হাবিব বৃহত্তর ফরিদপুর এবং বৃহত্তর বরিশাল জেলার পুলিশ অফিসারদের সংগঠিত করে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে নীল নকশা তৈরি করেন। এ সময় তিনি ডেপুটি কমিশনার (রমনা) আতিকুল ইসলাম এবং সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, সহকারী কমিশনার(রমনা) মইনুল ইসলাম-এর সহায়তায় রমনা অঞ্চলে গোপনে বিএনপি বিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতেন। তারা গোপনে বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামানকে সহযোগিতা করতেন এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্যাদি সরবরাহ করতেন। এসব কাজে তাদের সহযোগী হিসেবে সেসময়কার ডিএমপির এসি-ডিবি মনিরুজ্জামান বেল্টু, আসাদুজ্জামান এবং মাহবুব আলম কাজ করতেন। এছাড়াও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় ব্যাচমেট আনোয়ার হোসেন, হাফিজ আক্তার এবং ১৫ বিসিএসের ওয়াই এম বেলালুর রহমানের সহায়তায় তৎকালীন জোটসরকারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল নোমানের সমর্থকদের মধ্যে শত্রুতামূলক সম্পর্ক গড়ে তুলতে সচেষ্ট ছিলেন এবং এক পক্ষের সুবিধা নিতেন। হাবিবের গুরু একেএম শহিদুল হক সে সময় চট্টগ্রামের এসপি থাকায় চট্টগ্রামের স্থানীয় রাজনীতিতে গোপনে আওয়ামী লীগের মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতেন।

রাজশাহী রেঞ্জ অফিসে সংযুক্ত থাকা অবস্থায় তার সাথে রাজশাহী মেট্রো পুলিশের এসি মফিজ উদ্দিন এবং রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলামের গোপন আঁতাত হয়। ১৭ ব্যাচের মফিজ, আমিনুল এবং আবু কালাম সিদ্দিক তাকে রাজশাহী রেঞ্জের বিভিন্ন গোপনীয় তথ্য সরবরাহ করতেন। ১২তম ব্যাচের বর্তমান এডিশনাল আইজি কামরুল হাসান, র‍্যাব প্রধান খুরশিদ হোসেন, রেলওয়ে পুলিশ প্রধান দিদার আহমদ, এপিবিএন প্রধান হাসানুল হায়দার, রিভার পুলিশ প্রধান শফিকুল ইসলাম তার সাথে যোগসাজসে বিএনপি জোটসরকারের সময়ে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন জেলায় সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্টে বিভিন্ন অন্তর্ঘাতমুলক কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের তথা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্টদের সহযোগিতা করতেন। এর পাশাপাশি তিনি সাসপেন্ড থাকা অবস্থায় ভারতীয় দূতাবাসের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে তাদের পছন্দের সনাতন ধর্মীয় অফিসার পিবিআই প্রধান ১২ ব্যাচের বনজ কুমার মজুমদার, ১৫ ব্যাচের দেবদাস ভট্টাচার্য ও কৃষ্ণপদ রায়, ১৮ ব্যাচের বাসুদেব বনিক, পরিতোষ ঘোষ, এবং জয়দেব ভদ্র, ২০ ব্যাচের শ্যামল কুমার নাথ ও বিপ্লব বিজয় তালুকদার, ২১ ব্যাচের শ্যামল কুমার মুখার্জি, প্রবীর কুমার, জয়দেব চৌধুরী সহ সমমনা অফিসারের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন। আওয়ামী লীগের পরিচালিত সিআরআই গ্রুপে ডিআইজি মাবুদ এবং ডিআইজি শামসুদ্দোহা এর কাছে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিরোধী স্পর্শকাতর তথ্য সরবরাহ করতেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি হেডকোয়ার্টার পদে বসে হাবিব পুলিশ কমিশনার একেএম শহীদুল হকের সহযোগিতায় অসৎ উপায়ে চাকরি পাওয়ার কারণে বিএনপির আমলে চাকরিচ্যুত ২০ ব্যাচের মোল্লা নজরুল ইসলাম, আনিসুর রহমান, বিপ্লব বিজয় তালুকদার, হারুনুর রশিদ, এহসানুল্লাহ, সাইফুল ইসলাম, ফয়সাল মাহমুদ, সৈয়দ নুরুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান, এবং একুশ ব্যাচের মারুফ হোসেন সরদার, আসম মাহাতাব উদ্দিন, সাজ্জাদুর রহমান, আনোয়ার হোসেন, আহমারউজ্জামান, বিপ্লব কুমার সরকার, ২২তম ব্যাচের আলিমুজ্জামান, হাসানুজ্জামান, লিটন কুমার সাহা, এস এম মেহেদী হাসান, জায়েদুল আলম, নুরুন্নবী, সঞ্জিত কুমার রায়, ডঃ কামরুজ্জামানুজ্জামান এবং ২৪ ব্যাচের প্রলয় কুমার জোয়ারদারকে ভালো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পদায়ন করে এদেরকে হাতে নেন।

অতি চতুর হাবিব চাকরির শুরু থেকে বুঝতে পেরেছিলেন ১২ এবং ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নানা অজুহাতে পদোন্নতি বঞ্চিত করতে না পারলে তার পক্ষে পুলিশের আইজি অথবা অতিরিক্ত আইজিপি হওয়া অত্যন্ত দুরূহ। কুটবুদ্ধি সম্পন্ন হাবিব ঢাকা জেলার এসপি থাকাকালে বিসিএস পুলিশের ১২ এবং ১৫ ব্যাচের বিভিন্ন এসপিদের নামে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্যসম্বলিত বেনামি পিটিশন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, দুদক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইজিপি দপ্তর বরাবর পাঠাতে শুরু করেন। খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি মেজবাউদ্দিন চারিত্রিক স্খলনজনিত কারণে গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের রিপোর্টে ক্লোজ হলে কুটচালের রাজা হাবিব মেজবাহর সাথে গোপনে যোগসাজস করে তাকে এনএসআইয়ের ডাইরেক্টর এডমিন পদে বসাতে তদবির চালান এবং সফল হন। মেজবাহ হাবিবের নির্দেশমত এনএসআই যোগদানের পর বিসিএস ১২ এবং ১৫ ব্যাচের বিএনপি মনস্ক সৎ পুলিশ অফিসারদের নামে মিথ্যা, বানোয়াট এবং মনগড়া তথ্যসম্বলিত গোয়েন্দা রিপোর্ট তৈরি করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রেরণ করেন। এসব মিথ্যা রিপোর্টের কারণে ১২ এবং ১৫ ব্যাচের অধিকাংশ কর্মকর্তা এসপি হবার পর আর কোন পদোন্নতি পায়নি।

২০০৯ সালের আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় বসার পর থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রশাসন বিষয়ক পরে রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, জনতার মঞ্চখ্যাত সচিব আবু আলম শহিদ খান, সাবেক আইজি প্রিজন্স ও পিএসসি সদস্য লিয়াকত আলী খান, সাবেক আইজিপি এটিএম আহমেদুল হক, শেখ হাসিনার পিএস ও পরে শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান, কেবিনেট সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, মুখ্যসচিব কামাল আব্দুল নাসের, মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, মুখ্য সচিব মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির-বিন-আনোয়ার প্রমুখের সাথে ঘনিষ্ট যোগসাজশে বিসিএস পরীক্ষায় অনৈতিক ও অবৈধ উপায়ে ছাত্রলীগের পদধারী অযোগ্য ছাত্রদের এবং আওয়ামী লীগের অনুকম্পায় মুক্তিযোদ্ধা সনদপ্রাপ্ত পরিবারের সন্তানদের ভাইবা পরীক্ষায় তুলনামূলকভাবে বেশি নম্বর দিয়ে বিসিএস প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাডারে নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়। ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তান যারা এইচটি ইমামের লিস্টের মাধ্যমে চাকরি পেয়েছেন, হাবিব পুলিশ হেডকোয়ার্টারে বসে তাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ ডিএমপি, ডিবি এবং জেলার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ অফিসার হিসেবে পদায়ন করেন। এসব অফিসার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ কর্মকাণ্ডে কোন অবদান না রাখলেও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা রুজু করা, বন্দুকযুদ্ধের নাটকের মাধ্যমে ক্রসফায়ার দেওয়া, জঙ্গি সাজিয়ে বোমা এবং অস্ত্র উদ্ধার মামলায় ফাঁসানো, রিমান্ডে এনে বিরোধী দলের নেতাদের স্লো পয়জনিং করা বা মেরে ফেলা, মেরুদন্ডের ডিস্ক ভেঙে দেওয়া এবং দীর্ঘ দিন গুম করে রাখাসহ অন্যান্য মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের হোতা ছিলেন এই হাবিবুর রহমান, যার স্বীকৃতি হিসাবে ৫/৬টি বিপিএম/পিপিএম লাভ।

মাস্টার প্ল্যানার হাবিবের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে আইনবহির্ভূত অবৈধ কাজে লিপ্ত অফিসারদের মধ্যে আছেন ২৮ বিসিএসের নাজমুল ইসলাম, জাহিদুল হক তালুকদার, শাহেন শাহ, সত্য কি কবিরাজ, হাসান, আরাফাত, মাহমুদা আফরোজ, জুয়েল রানা, রহমতউল্লাহ, শরিফুল, নুরুল আমিন প্রমুখ; ২৯ ব্যাচের আব্দুল্লাহিল কাফি, আহমেদুল, হাফিজ এবং খোরশেদ; ৩০ ব্যাচের নুরী আলম, রফিক, হাফিজ, শফিক, এনামুল, আরিফুল, নাসিম, কামরুজ্জামান, আসাদুজ্জামান, আলাউদ্দিন, ইমতিয়াজ; ৩১ ব্যাচের হারুন, মিনহাজ, সাইফুর, ইহসানুল, মৃত্যুঞ্জয়, সাজ্জাদ, ইফতে খায়রুল, মোস্তফা কামাল, আনিছ, শাহাদাত, রবিউল, আরাফাত, তৌহিদুল, তাপস, রেজাউল; ৩৩ ব্যাচের শিবলী নোমান, মিশু বিশ্বাস, জাহিদুল, শচীন, নাসিরুল্লাহ, ইমরান, রাকিবুল, রাসেল, সাইফুল, জাকিয়া, শহিদুল, ইসরাত; ৩৪ ব্যাচের কামাল, সন্দ্বীপ, আশিক, মইনুল, মফিজ, জহির, সুজয়, আবুল, সাঈদ, নিয়তি, সাইফুল, মনতস, নাজিয়া, হালিম, নাজিজা, আবির প্রমুখ।

২০১৩ সালে জুনের আগে হাবিব ডিএমপিতে ডিসি(হেডকোয়ার্টার) পদে থাকতে ডিএমপি অস্ত্রাগারের অনেক গুলি বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে দেয়, পরবর্তীতে এসব গুলির কোন হদিস পাওয়া যায়নি। বিশেষ সূত্র মারফতে জানা গেছে, ওইসকল গুলি ২০১৪ সালের নির্বাচন পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সময়ে পুলিশ-ডিবি ব্যবহার করেছে বিরোধী দল নিধনে।

ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার থাকাকালে ২০১৩ সালের জুন মাস হতে ২০১৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী এবং ঢাকার র‍্যাব এবং ডিবি পুলিশের হাতে ক্রসফায়ারে নিহত বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের মৃতদেহ বাবুবাজার ব্রিজ হতে বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলার বিষয়টি কোঅর্ডিনেট করতেন এসপি হাবিব। দোহারের এমপি সালমা, যমুনা গ্রুপের মালিক বাবুল এবং বেক্সিমকোর মালিক সালমান এফ রহমান তথা দরবেশ বাবার সাথে এসপি হাবিব এ সময় গভীর সখ্যতা গড়ে তোলেন। হাবিব ঢাকার পুলিশ সুপার থাকাকালে ধামরাই কেরানীগঞ্জের ভুয়া ঠিকানা দেখিয়ে গোপালগঞ্জের স্থায়ী নিবাসী শত শত ব্যক্তিকে টাকার বিনিময়ে পুলিশ কনস্টেবল এবং এসআই পদে চাকরি দেন। এ বিষয়ে তৎকালে প্রথম আলো রিপোর্ট করে। হাবিব আশুলিয়া, সাভার, দোহার, কেরানীগঞ্জে তার অধঃস্থন ওসিদের দ্বারা যমুনা গ্রুপের মালিক বাবুলের জন্য কম টাকায় জমি বিক্রি করতে ভূমি মালিকদের বাধ্য করতেন। এর বিনিময়ে তিনি বাবুল থেকে মোটা অংকের টাকা ঘুষ নেন। হাবিব স্পেকট্রা গ্রুপ নামে একটি বেনামী প্রতিষ্ঠান রূপগঞ্জে গড়ে তোলেন। তিনি রূপগঞ্জের ভূমিদস্যু আণ্ডা রফিকের সাথে একজোট হয়ে মানুষের জমিজিরাত দখল, টাকা পয়সা লেনদেনের কাজ করে বেশ ভালো উপায় করেন। থানা পুলিশকে ব্যবহার করে রূপগঞ্জে গাজী গ্রুপের জন্য জমি দখল করে স্থানীয় এমপি গোলাম দস্তগীর গাজীর কাছ থেকে মোটা অংকের উপঢৌকন লাভ করেন। একই ভাবে নরসিংদী জেলার কাদির মোল্লা এবং জর্জ ভূইয়ার কাছ থেকে জমি দখল করে দেয়ার বিনিময়ে বড় অংকের ঘুষ গ্রহণ করেন। আশুলিয়া এবং সাভারের গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা নিতেন হাবিব। ঢাকা জেলার এসপি থাকাকালে তিনি সব জায়গায় নিজেকে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার লোক এবং নরেন্দ্র মোদির আস্থাভাজন হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের শেষভাগে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে সংস্থাপন শাখার এডিশনাল ডিআইজি পদে বসে আইজিপি শহিদুল হকের ক্যাশিয়ার হিসেবে সমগ্র বাংলাদেশে প্রত্যেক কনস্টেবল নিয়োগের জন্য ৬ থেকে ১০ লাখ, এবং প্রত্যেক এসআই/সার্জেন্টের জন্য ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা উত্তোলন করে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার মধ্যে আগাম প্রশ্ন সরবরাহ করেন। শুধুমাত্র যেসব পরীক্ষার্থী কাঙ্ক্ষিত টাকা দিয়েছে তাদের ভাইভাতে উচ্চ নম্বর প্রদান করে চাকুরী দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা তোলার দায়িত্বে তিনি তার বডিগার্ড, অর্ডারলি, অফিস সহকারী, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সমন্বয়ে টিম গঠন করেন। তার ঘুষের টাকার একটি বড় অংশ স্বরাষ্ট্র সচিব মোজাম্মেল হককে প্রদান করতেন।

হাবিবের নির্দেশনা অনুসারে পুলিশের প্রতি ব্যাচে শুধুমাত্র ছাত্রলীগ ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পন্ন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও পোষ্যগণ ব্যাচের জন্য একটি ফোরাম গঠন করেন। তার নির্দেশনা অনুসারে পুলিশকে জন্মস্থান ভিত্তিক ক্যাটাগরি করে অফিসারদের পোস্টিং দেওয়ার প্রথা শুরু হয়। বৃহত্তর ফরিদপুর এবং বরিশাল এলাকার অফিসারদের ডিবি পুলিশ, ডিএমপি, এবং জেলার ক্ষমতাবান পোস্টে নিয়োজিত করার বিধান চালু হয়। তার এই সময়কালেই গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, বাগেরহাট, বরিশাল জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দ্রুত প্রমোশন দিয়ে গ্রেড-ওয়ান পদে এবং অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদায়নের প্রথা চালু হয়।

পরবর্তীতে হাবিব ঢাকা রেঞ্জে বদলি হলেও পুলিশে নিয়োগ বদলি এবং পদোন্নতি পরোক্ষভাবে তার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতো। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের ক্যাশিয়ার হয়ে প্রত্যেক নিয়োগে, বদলিতে এবং পদোন্নতিতে টাকা উত্তোলন করেন। মন্ত্রী হওয়ার আগে আসাদুজ্জামান কামাল পুলিশের খাদ্য সাপ্লায়ারের কন্ট্রাকটর ছিলেন, ফলে আগে থেকেই দুর্নীতিবাজ পুলিশের সাথে ছিল তার সখ্যতা। মন্ত্রী আসাদুজ্জামানের পিএস বর্তমানে অতিরিক্ত সচিব ড. হারুনুর রশিদ বিশ্বাস, যিনি হাবিব এবং মন্ত্রী এই সিন্ডিকেটের মূল হোতা। তার অর্জিত অবৈধ টাকার বড় অংশ বেগমগঞ্জের হাবিব, মৌলভীবাজারের জিল্লুর, গোলাপগঞ্জের অপু হুন্ডির মাধ্যমে সিঙ্গাপুর, ইংল্যান্ড, ভারত এবং আমেরিকাতে মানি লন্ডারিং করেছেন।

বেনজির আহমেদের মতই তার নারী কেলেঙ্কারির স্ক্যান্ডাল সবাইকে আলোড়িত করে। পুলিশের চাকরির আগেও পিএসসিতে কেরানির চাকরি করাকালীন তার এক সহকর্মী হিন্দু মহিলার সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং তার গর্ভে একটি সন্তানও হয়। সে মহিলা আজও অবিবাহিতা বলে জানা যায়। ২২ ব্যাচের আবিদা সুলতানাকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বানানোর প্রকল্প দেওয়ার লোভ দেখিয়ে অনৈতিক কাজে বাধ্য করেন। পরবর্তীতে ২৪ ব্যাচের আসমা সিদ্দিকা মিলিকে জেলা এসপি বানানোর লোভ দেখিয়ে অনৈতিক কাজে বাধ্য করেন। জুনিয়ার নারী কলিগদের মধ্যে নাদিয়া, ইসরাত, আফিফা, কানিজ, মুক্তা, লিজা, লিমা, সাইকা সহ আরো অনেকের সাথে অনৈতিক সম্পর্কের গুঞ্জন রয়েছে পুলিশ ডিপার্টমেন্টে।

বারো ব্যাচের ডিআইজি মিজান ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার থাকাকালে যমুনা গ্রুপের বাবুলের সাথে জমি জমা দখলের বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীতে ডিএমপিতে থাকাকালীন মিজান পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামানকে সরিয়ে পুলিশ কমিশনার হতে চাইলে হাবিব, বাবুল এবং আসাদুজ্জামান মিলে একজন নারীর মাধ্যমে মিজানের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন বিষয়ক মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলায় আসামী হওয়ায় মিজান বরখাস্ত হন, এর ফলে হাবিবের সামনে ১২ এবং ১৫ ব্যাচের আর কোন অফিসার মাথা তুলে দাঁড়াতে সাহস করেনি। ১২ এবং ১৫ ব্যাচের অনেক অফিসারকে টপকিয়ে তিনি ২০১৮ সালে হঠাৎই ডিআইজি হয়ে যান। হাবিবই ১৭ ব্যাচের একমাত্র কর্মকর্তা যিনি ১২ এবং ১৫ ব্যাচের আগেই অতিরিক্ত আইজিপি হয়েছেন ২০২২ সালে। সাত বছরের জুনিয়র অফিসারকে সিনিয়র ব্যাচের উপরে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে, এমন নজির সিভিল সার্ভিসের অন্য কোন ক্যাডারে নেই।

২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ১৭ বিসিএস পুলিশের কনিষ্ঠতম ডিআইজি গোপালী হাবিবের বাড়াবাড়িতে ডিপার্টমেন্টের সিনিয়ররা রীতিমত অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের কিছু অতি উৎসাহি দলবাজ অফিসারের সাথে জোট করে হাবিব এবং তার সাঙ্গাতরা অপ্রতিরোধ্য গতিতে পুলিশ বাহিনীকে আ’লীগের লাঠিয়াল বানাতে নেমে পড়েন। তার দৌড়ঝাপ ও চাপাচাপিতে সেই বছর ২২ সেপ্টেম্বর পুলিশে ৪৯৫টি সুপারনিউমারী পদে পদোন্নতি দেয়ার প্রস্তাব পাঠিয়ে অপ্রত্যাশিত পদোন্নতির খবর কয়েকটি পত্রিকায় লিক করে দেয়া হয় কাস্টমার ধরার  জন্য। এতে করে দীর্ঘদিন ধরে বঞ্ঝিতরা, বিশেষ করে সিনিয়ররা আগ্রহী হয়ে খোঁজ খবর নিতে থাকে, এবং ৫/৭ ব্যাচ জুনিয়র ডিআইজি হাবিবকে তেল মারতে শুরু করে সিনিয়ররা। কিন্তু মহাধুরন্দর ডিআইজি প্রশাসন হাবিব ক্ষণে ক্ষণে কেবল মুচকি হাসে। তার সেই রহস্যময় হাসির মাজেজা তখন অনেকেই বুঝতে পারেনি। ডিআইজি হাবিব নিজেই খবর ছড়িয়ে দেয়- এডিশনাল ডিআইজি পদোন্নতির জন্য জনপ্রতি ৫ কোটি টাকা করে, এবং যারা ডিআইজি হবে তারা ১০ কোটি টাকা করে দিতে হবে। অনেকের সাথে আবার হাবিব তার ০১৭১……০০৪ নম্বরের মোবাইল থেকে কথাও বলেন, ‘দেখলেন তো স্যার (সবাই তার সিনিয়র), প্রমোশন না পেলে ডিপার্টমেন্টে কেমন হিউমিলিয়েশন হয়, সমাজেও চলা যায় না! তাই এবার প্রমোশন নিয়ে সম্মান ঠিক করুন। তবে পদোন্নতি পেতে হলে তো খয় খর্চা আছে। এই সামান্য কয়টা টাকা তুলতে আপনাদের এক মাসও লাগবে না! তাছাড়া এই টাকা তো আর আমি নিব না। ইলেকশনের বছর- আপা (শেখ হাসিনা) ইলেকশনের জন্য খরচা চেয়েছেন, তাই! এবারের প্রমোশন থেকে আমি ২০০ কোটি টাকা দেয়ার কথা দিয়েছি। আমি নিশ্চয় বাপের জমি বেইচ্চা আপারে টাকা দিব না! টাকা দিলে বলেন, না দিলে হবে না!’

হাবিবের পরিকল্পনায় ভারতের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে অন্য চোরা চালান, মাদক পরিবহন, গোল্ড স্মাগলিং, অবৈধ ভারতীয় ব্যক্তিদের অনুপ্রবেশ সহজ করতে এসপি এবং সার্কেলে এএসপি হিসেবে সনাতন ধর্মের অফিসারদের পোস্টিং দেওয়া হতো। হাবিবের আরেকটি কীর্তি হলো হিজড়া ও বেদেদের নিয়ে কাজ করা, উত্তরণ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ঢাকার আশুলিয়া, আমিনবাজার ও বি-বাড়িয়ায় হিজড়াদের বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে বেদে এবং হিজড়াদের নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন হাবিব। এদেরকে অপব্যবহারের খবরও আছে। এজন্য পুলিশ মহলে তাকে ‘হিজড়া হাবিব’ ডাকে।

পুলিশের রেশন সামগ্রী তার প্রিয় লোকদের কাছ থেকে কেনার জন্য এসপিদের বাধ্য করেন হাবিব। এই কাজের মাধ্যমে তিনি বড় অংকের উৎকোচ পান। সমগ্র জেলাগুলোর জন্য আখতার ফার্নিচারের কাছ থেকে ফার্নিচার ক্রয় করতে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের অর্ডার দিয়ে বাধ্য করা হয়। আকতার ফার্নিচার এ কারণে তাকে বিশাল অংকের ঘুষ দিয়েছে। নাভানা ডেভলপার্সের আইকনিক টাওয়ারে তার ফ্ল্যাট রয়েছে। উক্ত এপার্টমেন্ট ফ্লাট আকতার ফার্নিচার তাকে উপহার (আসলে উৎকোচ) হিসেবে দিয়েছে।

২০১৮ সালের নির্বাচন কারসাজির পেছনে রয়েছে হাবিব এবং নির্বাচন কমিশন সচিব হেলাল উদ্দিনের অবদান। এমনকি এ কাজে সিইসি নূরুল হুদার সাথে হাবিব গোপন মিটিং করে নির্বাচনের ঠিক আগে। এসময় সমগ্র বাংলাদেশকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়: রংপুর এবং রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন বেনজির এবং আতিক; ঢাকা এবং ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন আসাদ এবং প্রলয়; চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন শফিক এবং হাবিব; বরিশাল ও খুলনা বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন মীর শহীদ এবং মনিরুল। নির্বাচনের আগের রাতে কমপক্ষে ৭০% ব্যালট সিল সিল মেরে বাক্স ভরে রাখার জন্য পুলিশ বিজিবি আনসার এবং প্রিজাইডিং অফিসারের প্রত্যেক অফিসারের জন্য আলাদাভাবে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এক্ষেত্রেও হাবিব সেই হাজার হাজার কোটি টাকা বিতরণের ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজ করেন।

Leave a Comment

You may also like

Critically acclaimed for the highest standards of professionalism, integrity, and ethical journalism. Ajkerkotha.com, a new-generation multimedia online news portal, disseminates round-the-clock news in Bangla from highly interactive platforms.

Contact us

Copyright 2021- Designed and Developed by Xendekweb