পুলিশ পোষাকে দোর্দন্ড প্রতাপের সাথে অপরাধ করা মাফিয়া চক্রের উপরে প্রকৃতির গজব নেমে এসেছে। মৃত্যু, ভবিষ্যত মামলা, ফাঁসির সম্ভাবনা, জেল, লুট করে জমানো সম্পদ হারানো, সন্তান ভাই-বোন পরিবারের অজানা ভবিষ্যত, চলমান মার্কিন সেংশন এর পরিধি বৃদ্ধি, পালানোর পথ সংকুচিত হয়ে আসা, গ্রুপিংয়ের ফাঁদ সহ নানা আতঙ্কে দিন পার করছে বাংলাদেশে অপরাধী পুলিশ কর্তারা। কিছুদিন আগেও যারা খুন, গুম, নির্যাতন, মামলা হামলা চালিয়ে পুলিশ বাহিনীকে মূর্তিমান দানব বাহিনীতে পরিণত করেছিল, এখন তারাই মৃত্যু ভয় সহ নানাবিধ আতঙ্ক নিয়ে দিন পার করছে। প্রথম ধাপে কয়েক জনের হাঁড়ির খবর বাড়ীর খবর প্রকাশ করা হলো।
বেনজির আহমেদঃ
বেনজির আহমেদের মতো পোষাকপড়া অপরাধীর নজির বর্তমানে বা অতীতে আর কখনই ছিলনা। এমনকি কোন শীর্ষ সন্ত্রাসীরও এতো অপরাধের রেকর্ড নেই। তাই সে নিজেই নজিরবিহীন। গুম, খুন, নির্যাতন, দুর্নীতি, লুটপাট, নারী কেলেঙ্কারী সহ অসংখ্য অপরাধের তালিকা নিয়ে সে শীর্ষ অপরাধী পুলিশ। ঘরে সুন্দরী স্ত্রী ও তিন সাবালিক কন্যা থাকলেও নাটক-সিনেমা জগতের সুন্দরী শিল্পী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী, প্রতিকারপ্রার্থী, তরুনী, যুবতী, গৃহবধু, রাজনৈতিক নেত্রী-কর্মীকে নিত্য শয্যসঙ্গী করে বেনজির। এরূপ অসংখ্য নারীর জীবনে বেনজির নেমেছিল পাকহানাদার বাহিনীর মতো। নায়িকা একা’র জীবন ধংস করে দিয়েছেন বেনজির। চিত্রনায়িকা কেয়ার সাথে নিয়মিত বিশেষ একটি ফ্লাটে মিলিত হতেন বেনজির। কেয়াকে দীর্ঘকাল রক্ষিতা বানিয়ে রেখেছিল।ইডেন কলেজের শারমিন নামের এক মেয়েকে অন্তঃসত্তা করে নিজের ড্রাইভার দিয়ে রাজধানীর একটি ক্লিনিকে এবরশন করায় বেনজির। এসপি থাকাকালে তার অধীনস্থ এক এডিশনাল এসপির স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছিল বেনজির। আরেক সুন্দরী তরুনী এএসপিকে নিয়ে সুন্দরবনের গহীন অরণ্যে চলে যায়। ডিএমপি কমিশনার থাকতে নারী কেলেঙ্কারীর কারণে বেনজীরের সাথে তার স্ত্রীর তুমুল গোলমাল থেকে মারপিট, শেষে হাসপাতালে গড়ায়। পরিমনি-কান্ড সহ রাজধানীর যেখানেই বড় ধরনের নারী কেলেংকারী, সেখানেই নাম ওঠে বেনজিরের। পুলিশ বাহিনীতে তার চেয়ে লম্পট ধর্ষক পুলিশ আগে কখনো আসেনি। মীম নামের এক শিল্পীকে ভোগ করা নিয়ে ভোলার মেয়র মনিরুজ্জামানের সাথে কামড়াকামড়ি এমন পর্যায়ে গিয়েছিল যে মনিরকে হত্যা করতে তুলে এনেছিল বেনজিরগং। আওয়ামীলীগের বড় নেতা তোফায়েল আহমেদের (ভাগিনা হওয়ায়) হস্তক্ষেপে সে যাত্রা মনিরুজ্জামান বেঁচে যায়। ওই অপারেশনে পুলিশের কোন্ কো্ন্ অফিসার উপস্থিত ছিল, কে গানপয়েন্ট করেছিল, সব তথ্য সংগৃহিত আছে। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে আইন কানুনের নুন্যতম প্রয়োগ থাকলে বেনজির আইজিপি হওয়া তো দুরের কথা, তার কৃতকর্মের কারণে বহু আগেই যাবজ্জীবন জেলে থাকতো, ফাঁসিও হতো। কিন্তু তা হয়নি বরং বহাল তবিয়তে আছে, লম্ফঝম্ফ করেই যাচ্ছে। এক বেনজিরের দূর্নীতি, লাম্পট্য, গুম-খুন সহ অপরাধনামা বহু খন্ডে লিখেও শেষ করা যাবে না। লাম্পট্যনামার পৃথক প্রতিবেদন প্রকাশিতব্য। তবে ইদানিং মার্কিন সেংশনের পর নিষিদ্ধ বেনজির কিছুটা চুপসে গেছেন। আমেরিকা, দুবাই ও ইউরোপে জমানো দূর্নীতি ও লুটের টাকার বড় অংশ ইতোমধ্যেই বেহাত হওয়ার খবর আসছে। দৃশ্যত মনোবল চাঙ্গা দেখানোর চেষ্টা করলেও খিট খিটে মেজাজে অধিনস্থদের সাথে প্রায়শই খারাপ আচরণ করছে। কাজে কর্মে মন নাই, ঠিক সময়ে অফিস করে না, কখন কোথায় যায় সিকিউরিটি, গোয়েন্দা, স্টাফ, সরকার কেউ জানে না। বড় সংবাদ হলো বেশ শরীর খারাপ- হাইপারটেনশনের বেহাল দশা, ডায়াবেটিকের লেভেল ওঠানামা করছে এবং নার্ভাস ব্রেক ডাউন ঘটেছে। মার্কিন সেংশন এর ইম্প্যাক্ট, পালানোর পথ প্রায় বন্ধ হওয়া, ভবিষ্যত মামলা ও জেল, জমানো সম্পদ হারানো, সন্তান ও পরিবারের অন্ধকার ভবিষ্যত, অসুস্থতার বেহালদশা সহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত বেনজির ভুগছে মৃত্যুর প্রবল আতঙ্কে। এয়ারমার্ক সরকারী বাসায় বসবাস করেন না, বেশিরভাগ গুলশানের আলিশান ফ্ল্যাটে থাকলেও, মাঝে মাঝে বসুন্ধরার নিকটস্থ গোপনীয় এক বাসায় রাত্রিযাপন এখন তার হাল ফিল।
জয়েন্ট কমিশনার হারুনঃ
আমেরিকায় হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারকারী জয়েন্ট কমিশনার হারুন মোটেও ভাল নেই। সেখানে জমানো টাকার বড় একটা অংশ অলরেডি মার্কিন সরকার বাজেয়াপ্ত করেছে। গাজীপুরের এসপি থাকাবস্থায় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার অবৈধ কামাই, শত শত একর জমির মালিক হারুন গত নির্বাচনের আগে পোস্টিং নিয়েছিল এসপি নারায়ণগঞ্জ হিসাবে। সেখানে যোগদান করেই প্রত্যেক থানার ওসিকে টার্গেট দিয়েছিল ১ মাসের মধ্যে ৫ কোটি টাকা সালামী দিতে হবে। পার্টেক্স গ্রুপের এমডির স্ত্রী সন্তানকে গুলশানের বাসা থেকে অপহরণ করার ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ মিডিয়ায় চলে আসার পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হারুনকে ঢাকায় ক্লোজ করে। টাকার খনি থেকে পোস্টিং হয়ে যাওয়ায় হারুন তখন মিডিয়ার সামনে কেঁদে কেঁদে অভিনয় করেছিল। হারুনের কর্মকান্ডে তার উপরে পুলিশ বাহিনীর শত শত কর্মকর্তা হ্মুব্ধ। পরিমনির ঘটনার পর হারুনকে এখন আর টিভিতে দেখা যায়না। হারুনকে এক প্রকার দায়িত্বহীন করে রাখা হয়েছে। শারীরিক ভাবে হারুন প্রচন্ড অসুস্থ। কিছুদিন আগে তার শরীরে মেজর অপারেশন হয়। মৃত্যু ভয়ে ঘুমের মধ্যে আঁতকে ওঠা হারুন বেডরুমে বডিগার্ড নিয়ে ঘুমায়। রাতের বেলায় চিৎকার করে বারবার জেগে ওঠে। চরম খারাপ আচরণ, গালাগালি বদমেজাজির কারনে ইতোমধ্যে তার একজন বডিগার্ড ভেগেছে। বর্তমান বডিগার্ডও ভাগবে বা অচিরেই চাকুরী থেকে রিজাইন দিবে বলে জানা যায়।
আনিসুর রহমানঃ
ঘুষ দূর্নীতিতে নষ্ট হয়ে যাওয়া এক মেধাবী অফিসার আনিস। ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার ক্রাইম হিসাবে কর্মরত অতিরিক্ত ডিআইজি আনিসুর রহমান ২০ ব্যাচের কর্মকর্তা। দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন শেরপুর যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও মহিলা কোটায় সাবেক এমপি এ্যাডভোকেট ফাতেমাতুজ্জোহরা শ্যামলীকে।আনিসুর দূর্নীতি লুটপাটের শত কোটি টাকা জমা করেছিল প্রতিবেশি দেশ ভারতে। সেখানে এনআরসি নিয়ে আন্দোলন ও গোলযোগপূর্ণ অবস্থার পরপরই ভারত থেকে ধীরে ধীরে টাকা সরিয়ে নেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ২০২১ সালে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর অনেক পুলিশ কর্মকর্তার দূর্নীতির টাকা বেহাত হওয়া শুরু হয় যার মধ্যে একজন এই আনিস। আনিসের মাগুরা বাড়ী এক বন্ধুর কাছে মালেশিয়ায়তে প্রচুর টাকা রেখেছিল যার সাথে এখন অনেক ঝামেলা চলছে। এরি মধ্যে উক্ত বন্ধুর ভাইকে ডেকে এনে আনিস হুমকিও দিয়েছে।
একসময় যেসব প্রতাপশালী পুলিশ কর্মকর্তার ভয়ে আতঙ্কিত থাকতো দেশবাসী সহ খোদ পুলিশ প্রশাসন, তারাই এখন নানা রোগে আক্রান্ত, বহুবিধ মামলার আশঙ্কা, গণপিটুনি, অনেক আবার ফাঁসির দড়িতে ঝুলা সহ নানা আতঙ্কে অস্থির দিন যাপন করছেন। দুর্নীতি খুন, দলবাজিতে ওস্কাদ আইজিপি একেএম শহিদুল হক রিটায়ার করার পরে তার ছোট ভাইকে এলাকায় পেটানো হয়েছে। মার খাওয়ার ভয়ে শহিদুল এখন আর সকালে হাটতেও বের হয়না। অনেক পুলিশ কর্মকর্তা পাসপোর্টে ভিসা লাগিয়ে, রেখেছে কিন্তু পালাতে পারবে কিনা অনিশ্চিত। কেউ কেউ ইতোমধ্যে ঢাকার বাইরে এবং ডাম্পি পোস্টিংয়ে গিয়ে নিজেদের মুখ লুকানোর চেষ্টা করছে। অপরাধী পুলিশ গংদের অপরাধনামা সিরিজ আকারে প্রকাশ শুরেু হবে যেকোনো সময়।