লন্ডন (১৬ ডিসেম্বর ২০২২) বাংলাদেশের বিজয় দিবসের ৫১তম বার্ষিকী উপলক্ষে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিজয় দিবসের এই বার্তায় তারেক রহমান বলেছেন, চলমান গণ আন্দোলন দেশকে নৈরাজ্য মুক্ত করা, নাগরিকদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা সুরক্ষা করার আন্দোলন। এই আন্দোলনে জনগনের বিজয় সুনিশ্চিত,ইনশাআল্লাহ।
তারেক রহমানের পূর্ণাঙ্গ ভাষণ…
প্রিয় দেশবাসী, গণতন্ত্রকামী প্রিয় জনগণ। আপনাদেরকে জানাই বাংলাদেশের ৫২তম মহান বিজয় দিবসের প্রানঢালা শুভেচ্ছা।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে তৎকালীন মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে যে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল লাখো মানুষের আত্মত্যাগ আহাজারো মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে, মুক্তিযোদ্ধাদের অসম সাহসিকতায় ১৯৭১ সালের এই দিনে অর্জিত হয়েছিল
বাংলাদেশের সু’মহান বিজয়। বিজয়ের এই দিনে আমি সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা।
মুক্তিযোদ্ধারা যে স্বপ্ন নিয়ে দেশটি স্বাধীন কোরেছিলেন হানাদারবাহিনীকে হটিয়ে দিয়ে যে গৌরবজনক বিজয় অর্জন করেছিলেন সেই বাংলাদেশটি বর্তমানে মাফিয়া চক্রের কবলে পড়ে হারাতে বসেছে বিজয়ের সুমহান মর্যাদা।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র ছিল সাম্য-মানবিক মর্যাদা- সামাজিক সুবিচার। তবে দুর্ভাগ্য জনক হলেও সত্য…স্বাধীনতা পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্র ও সমাজে মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল। মানুষের বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল। দেশে দুর্নীতি, গুম, খুন, অপহরণ, নৈরাজ্য কায়েম করেছিল।
.
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সকল নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ। অপশক্তিকে পরাজিত করে স্বাধীনতার ঘোষকের নেতৃত্বে
বাংলাদেশ ফিরেছিল সমৃদ্ধির ধারায়। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তি মহাজোটের নামে একজোট হয়ে আজ আবারো দেশে সর্বক্ষেত্রে নৈরাজ্য কায়েম করেছে। আওয়ামী অপশক্তির নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে আজ আবারো ৭৫ এর ৭ নভেম্বরের চেতনায় উজ্জীবিত বাংলাদেশ।
মাফিয়া চক্রের সকল বাধা মোকাবেলা করে নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে এবং ভোটাধিকারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লাখো-কোটি মানুষ নেমে এসেছে রাজপথে। বিএনপির আহবানে সাড়া দিয়ে মানুষের অধিকার দাবিতে সম্প্রতি ঢাকাসহ সারাদেশে ১০টি বিভাগীয় গণ সমাবেশে হাজির হয়ে
মুক্তিকামী জনগণ বার্তা দিয়েছে, মাফিয়া চক্রের সময় শেষ জনগণের বাংলাদেশ।
দেশের জনগণ সাক্ষী, গণতন্ত্রকামী মানুষ যাতে বিএনপি আয়োজিত সমাবেশগুলোতে যোগ দিতে না পারে এ জন্য মাফিয়া সরকার
সকল রকমের অপচেষ্টা চালিয়েছিল। দলীয় ক্যাডার আর পুলিশের ইউনিফর্ম পরিয়ে একটি সন্ত্রাসী চক্রকে জনগণের পেছনে লেলিয়ে দিয়েছিলো । সমাবেশ বানচাল করতে এই সন্ত্রাসী চক্র সমাবেশে পাখির মতো গুলি করে বিএনপির কয়েকজন নেতা কর্মীকে হত্যা করেছে।
অসংখ্য মানুষকে আহত করেছে।
বিএনপির মহাসচিব, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং দলের সিনিয়র নেতৃবৃদসহ সারাদেশে শত শত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে কারাবন্দি করেছে। সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা কিংবা গায়েবি মামলা দিয়ে নির্যাতন ও হয়রানি অব্যাহত রেখেছে। ..
এতকিছু করেও নিজেদের অধিকার আদায়ের দাবিতে সোচ্চার মুক্তিকামী মানুষকে এই ফ্যাসিস্ট সরকার দমিয়ে রাখতে পারেনি।
সারাদেশে, দলের সর্বস্তরের নেতা কর্মী সমর্থক এবং মুক্তিকামী মানুষ, যারা মাফিয়া সরকারের হুমকি ধামকি আর পুলিশের ইউনিফর্মধারী
সন্ত্রাসীদের গুলি বন্দুকের নলের ভয় উপেক্ষা করে, যেভাবে বিএনপির প্রতিটি সমাবেশকে সফল করেছেন আমি সেই সকল মুক্তিকামী সাহসী মানুষদের জানাই আন্তরিক অভিনন্দন।
যে জাতি মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় অকাতরে প্রাণ দিতে পেরেছে …যে জাতি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ করে মাত্র নয় মাসে একটি দেশ স্বাধীন করতে পেরেছে, তাদেরকে শেখ হাসিনার বর্বর বন্দীখানা ‘আয়নাঘর’ কিংবা সীমান্তের ওপারে রেখে আসার ভয় দেখিয়ে, আর দমিয়ে রাখা যাবেনা।
জনগণের দাবি আদায়ে বিএনপি গত ১০ ডিসেম্বর ১০ দফা দাবি দিয়েছে। এ ১০ দফা বিএনপির একক কোনো দলীয় কর্মসূচি নয় …বরং এ ১০ দফা জনগণের মুক্তির সনদ। এ ১০ দফা জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার দলিল। এ ১০ দফা দাবির প্রতি ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি, গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি, সর্বাত্মক সমর্থন জানিয়েছে।
আমি বিশ্বাস করি আমাদের দল বিশ্বাস করে দেশের জনগণই বিএনপির সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস্য।জনগণ যদি ক্ষমতাবান থাকে
তাহলে একটি দেশ কখনোই পথ হারাতে পারেনা। তাই,দেশের স্বাধীনতার রক্ষার জন্য নিজেদের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সর্বোপরি গণমুখী রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন জনগণের ক্ষমতায়ন। জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্বশর্ত প্রতিটি নাগরিকের ‘ভোটাধিকার’ নিশ্চিত করা।
দেশের জনগণের ভোটের অধিকার নেই বলেই, বর্তমানে রাষ্ট্র পরিচালনায় মাফিয়া চক্র। জনগণের ভোটাধিকার নেই বলেই এখন দেশের আইনসভায় বেআইনী সদস্য, জনগণের ভোটাধিকার নেই বলেই,এখন বিচার বিভাগে অবিচার, দুদকে দুর্নীতি, শৃঙ্খলাহীন আইনশৃঙ্খলাবাহিনী,
শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসী,ব্যাংকগুলো প্রায় দেউলিয়া মানুষের দিন-কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে লুটপাট, টাকাপাচার আর বেপরোয়া দুর্নীতি।
দুর্নীতিই এখন আওয়ামীলীগের নীতি। এক কথায় সর্বক্ষেত্রে নৈরাজ্য। কোথাও কোনো জবাবদিহিতা নেই.
তরুণ প্রজন্মের প্রিয় ভাই ও বোনেরা আর এ অবস্থা চলতে দেয়া যায়না এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্য ৫২ কিংবা ৭১ এর মতো, তরুণরাই সবচেয়ে সাহসী ভূমিকা রাখতে পারে। গত একযুগে প্রায় আড়াই কোটি তরুণ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তবে এই তরুণরা ২০১৪ কিংবা ২০১৮ ,
কোনোবারই ভোট দেয়ার সুযোগ পায়নি। তাই, গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রতি আমার উদাত্ত আহবান ‘ভোটাধিকার’ অর্জনের দাবি আদায়ে যে এবার যে কোনো মূল্যে ঐক্যবদ্ধ থাকুন। ভোটাধিকারের দাবি আদায়ে চলমান গণ আন্দোলনে শামিল হোন।
আমি জানি,ভোটাধিকার আদায়ের মিছিলে যোগদানের কারণে অনেককেই হয়তো মাফিয়া চক্রের রোষানলে পড়তে হতে পারে।
অনেকে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। তবে আমরা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারি তাহলে ভোট ডাকাতরা অবশ্যই পিছু হটতে বাধ্য হবে। আমরা যদি ভোটাধিকার আদায় করতে সক্ষম হই, আমরা যদি গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো আদায় করতে সক্ষম হই,
তাহলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ সাহসী ভূমিকার কারণে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি নিরাপদ গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ দেখতে পাবে।
নতুন প্রজন্মের প্রিয় ভাই ও বোনেরা ভোটের অধিকার, প্রতিটি ভোটারের একান্ত অধিকার।আপনার ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য আপনারা আমার হাত শক্তিশালী করুন। আপনার এই ‘একান্ত অধিকার’ আদায়ের মিছিলে আমি এবং আমাদের দল বিএনপি আপনাদের সঙ্গে আছি, থাকবো। ‘ভোটের অধিকার’ আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের মিছিল-সমাবেশ-প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে। আপনার ভোটের অধিকার আদায়ের মিছিলে আমার কিংবা আমাদের থাকার অর্থ এই নয় যে আপনার ভোটটি আমাকে কিংবা আমার দলকেই দিতে হবে।
বরং আমি চাই, আমরা চাই, বিএনপি চায় নাগরিকদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে। আমরা চাই প্রতিটি নাগরিক তাঁর ভোটের অধিকার ফিরে পাক দিনের বেলা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নিজেই নিজের ভোটটি যাকে ইচ্ছে তাকে দিক। সুতরাং, নিজের অধিকার সমুন্নত রাখার স্বার্থেই
দলমত নির্বিশেষে প্রতি নাগরিককে ভোটের অধিকার আদায়ের মিছিলে শামিল হওয়ার আহবান জানাই। অধিকার আদায়ের এইসব মিছিলে
গণতন্ত্রকামী জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহন চলমান এই আন্দোলনকে সফলতায় পৌঁছে দেবে …ইনশাল্লাহ।
মাফিয়া সরকার পুলিশ প্রশাসনকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তবে জনগণ বিশ্বাস করতে চায় অধিকাংশ পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য পেশাদারিত্বের সঙ্গেই আইনানুগ দায়িত্ব পালনের পক্ষে। কিন্তু অবৈধ সুযোগ সুবিধার আশায়,গণতন্ত্রকামী জনগণের সঙ্গে পুলিশের ইউনিফর্ম পরা একটি চিহ্নিত চক্রের আচরণ সন্ত্রাসীদের মতো।
আমি দেশের জনপ্রশাসন বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আমার আহবান মাফিয়া সরকারের অবৈধ ক্ষমতার লিপ্সা মেটাতে
আপনারা আর নিজেদেরকে ব্যবহার করবেন না একজন মাত্র ব্যক্তির অবৈধ ক্ষমতার খায়েশ মেটাতে গিয়ে এখন সারাবিশ্বে
বাংলাদেশের র্যাব-পুলিশের ইমেজ কলংকিত।
দেশে বিদেশে সবাই জানেন, নিশিরাতের সরকারটি জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। নিশিরাতে ভোট ডাকাতি করে শেখ হাসিনা ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছে। সুতরাং, এই মাফিয়া সরকারকে রক্ষা করতে আপনারা আর জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন না জনগণের দিকে বন্দুক তাক করবেন না আপনারা সরকারের অবৈধ আদেশ মানতে বাধ্য নন।
আমি সংশ্লিষ্ট সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই বিএনপি প্রতিশোধ প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করেনা। সুতরাং কারো কোনো ভয় নেই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচিত ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক সরকার কারো বিরুদ্ধে কোনো বেআইনী পদক্ষেপ নেবেনা।
চলমান এই আন্দোলন,দেশ- নৈরাজ্য মুক্ত করার আন্দোলন, চলমান এই আন্দোলন…ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন
চলমান এই আন্দোলন,স্বাধীনতা সুরক্ষার আন্দোলন। জনগনের বিজয় সুনিশ্চিত,ইনশাআল্লাহ।
video Link : https://www.youtube.com/watch?v=BAbr4-QlZTs