আজ সন্ধ্যায় গুলশানের একটি সেইফ হাউজে ডিজিএফআইর উদ্যোগে এক গোপন মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। এতে গুম খুন সংক্রান্ত জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের নথির বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা যুদ্ধ চালু করার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। সিদ্ধান্ত হয় দেশে বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রোপাগান্ডা চালানো হবে। এজন্য যত অর্থ প্রয়োজন সব রাষ্ট্রীয় ফান্ড থেকে খরচ করা হবে। সেমিনার, আলোচনা, টকশো, ভিডিও অডিও ক্লিপ তৈরি করে দেখানো হবে যে, এইসব তালিকা বিএনপি/জামায়াতের প্রোপাগান্ডা মাত্র, বাস্তবে এসব ঘটেনি। এই যুক্তির সমর্থনে ২/১ জনকে হাজির করা হবে যারা ছাড়া পেয়েছেন বা মুক্ত আছেন। তাছাড়া এইসব তালিকার মধ্যে নানা রকম খুচরা পয়েন্ট তুলে তা বড় করে জাতিসংঘের তালিকাকে ভুল ও বানোয়াট বলার চেষ্টা করা হবে। বিদেশের বিভিন্ন নামী দামী মিডিয়ায় টাকা খর্চ করে লেখানো হবে। এমনকি লবিয়িস্ট ফার্মের মাধ্যমে টাকা খরচ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের এমপিদেরকে হায়ার করে তাদের মাধ্যমে সংসদে পয়েন্ট রেইজ করে বিতর্ক তৈরি করা হবে। ইতেমধ্যে উপস্থিত সুলতানা কামাল লেখালেখি শুরু করে দিয়েছেন জানিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। তবে এসব তৎপরতা কতদিন চালানো বাস্তবসম্মত হবে, তা নিয়ে অনেকের সংশয় আছে, এমনকি ফলাফল নিয়েও।
বৈঠকে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা অধিদপ্তরের (DGFI) বর্তমান মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আহমেদ তাবরেজ শামস ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগন লে.জে. (অব.) মোল্লাহ ফজলে আকবর, লে.জে. (অব.) মামুন খালেদ, এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ ছাড়াও আরও অনেকের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সর্বজনাব প্রফেসর ইমিতিয়াজ আহমেদ, মাহফুজ আনাম, মতিউর রহমান, প্রফেসর মেসবাহ কামাল, মোহাম্মদ এ আরাফাত, সুলতানা কামাল, মোজাজ্জেল বাবু গং।
উল্লেখ্য গুম খুনের মত মারত্মক মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকায় বাংলাদেশের র্রাপিড অ্যাকশন ব্যাটলিয়ন, ঐ বাহিনীতে কাজ করা ৭ কর্মকর্তার যাদের মধ্যে ২ জন পুলিশ প্রধান ও ৫ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সরকার প্রধান থেকে শুরু করে পুরো সরকার ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখায়, বারে বারে ধর্ণা দেয় এটি তুলে নিতে। যুক্তরাষ্ট্র তুলে তো নেয়ই নি, উল্টো আরও নতুন তালিকা নিয়ে স্যাংশন আসার কথা শোনা যাচ্ছে।
অন্যদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ বিভিন্ন সময় গুমের শিকার হওয়া ৭৬ জনের একটি তালিকা গত বছর বাংলাদেশ সরকারকে দেয়। এ বিষয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় মানবাধিকার পরিষদের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপে আলোচনা হয়। সর্বশেষ ১৪ আগস্ট জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেত ঢাকা সফরের সময় এ তালিকা নিয়ে সরকারের সঙ্গে কথা বলেন, এবং স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য চাপ প্রয়োগ করে। মিশেল ব্যাশেলেতের সঙ্গে আলোচনায় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওয়ার্কিং গ্রুপ ৭৬ জনের যে তালিকা দিয়েছে, তাঁদের মধ্যে ১০ জনের খোঁজ পাওয়া গেছে। বাকিদের মধ্যে ১০ জনকে খুঁজে পেতে পুলিশ সহযোগিতা করতে চাইলেও তাঁদের স্বজনদের কাছ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি। বাকি ৫৬ জন ‘পলাতক’ বা নিখোঁজ। অবশ্য সরকার শুরু থেকেই গুমের ঘটনাগুলো অস্বীকার করে আসছে।