বিশেষ প্রতিনিধি
গুরুতর মানবাধিকার হরণের অপরাধে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ ঘোষিত বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান বেনজির আহমদেকে জাতিসংঘের বার্ষিক পুলিশ প্রধান সম্মেলনে অংশ নিতে কঠিন শর্তে ৪৮ ঘন্টার জন্য আমেরিকার ভিসা মঞ্জুর করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি নিউইয়র্কে প্রবেশের অনুমতি পাবেন কি না তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কেননা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা থাকলেই সবাইকে সে দেশে ঢুকতে দেয়া হয় না, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও স্বার্থে ক্ষতিকারক যে কাউকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ আটকে দেয়ার ক্ষমতা রাখেন দেশটির হোমল্যান্ড সিকিউরিটি।
নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আগামী ৩১ আগষ্ট ও ১লা সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় পুলিশ সম্মেলনে যোগ দিতে বাংলাদেশেকে আমন্ত্রন জানানো হলে বাংলাদেশের হাসিনা সরকার এই সুবিধাটি নিয়ে আইজিপি বেনজির আহমদেকে জাতিসংঘে পাঠিয়ে তার ওপরে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া স্যাংশনকে খাট করার একটি কূটকৌশল গ্রহণ করে। প্রথম দফায় বেনজিরের ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করে ঢাকার যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস। এরপরে দ্বিতীয় চেষ্টায় অনেক তয় তদবীর এবং লবিয়িং চালায় বেনজির ও সেগুণবাগিচা। বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আপীল করে জাতিসংঘের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের করা চুক্তির অধীনে মেম্বার স্টেটের যেকোনো প্রতিনিধিকে (তার উপরে স্যাংশন থাকলেও) যুক্তরাষ্ট্র ভিসা দেয়ার নিশ্চয়তা দানের কথা, বিশেষ করে ঐ বিধানে রাশিয়া এবং ইরানের নিষিদ্ধ কূটনীতিকরাও জাতিসংঘে আসা যাওয়া করে। এই যুক্তি এবং তদবীরে ফলে কেবলমাত্র সম্মেলনস্থলে অংশগ্রহণের শর্তসাপেক্ষে দেশটির ভিসা মিলেছে বেনজীরের। অবস্থানের সময় ৪৮ ঘন্টা। তবে মেনে চলতে হবে কঠিন শর্ত, যার ব্যতিক্রম ঘটালে কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে হলে আটক হতে পারেন গুম-খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত বেনজীর আহমেদ। উল্লেখ্য, এর আগে জাতিসংঘের অধিবেশনে এসে এরূপ শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে ভেনিজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আটক করা হয়েছিল নিউইয়র্কে।
মানবাধিকার হরণে নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত আইজিপি বেনজীরকে ডেলিগেশন তালিকায় না রাখার অনুরোধ উপেক্ষা করে জাতিসংঘের চিফ অব পুলিশ সামিটে (ইউএনকপ) সম্মেলনের জন্য মনোনীত করে ক্ষমতাসীন হাসিনা সরকার। তাই ভিসা দিলেও বাড়াবাড়ির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে দু’দিন অবেস্থানকালে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দাদের নেটওয়ার্কে থাকবেন বেনজির। ভিসার শর্তানুসারে তিনি নিউইয়র্কে ৪৮ ঘন্টার বেশী অবস্থানের সুযোগ পাবেননা। এছাড়া নিউইয়র্কে সম্মেলনস্থল ও হোটেলের বাইরে দেশটির অন্য কোনো জায়গায় যাওয়ার, অন্য কোনো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ বা রিসেপশনে যোগ দেয়া, বা শপিং বা সাক্ষাতের কোনো সুযোগ নেই বাংলাদেশের আইজিপি বেনজিরের। যেতে পারবেন না যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে এবং সেখানে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে। কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ৪৮ ঘন্টার বেধে দেয়া এই সময়সীমার শর্ত কিছুতেই লঙ্ঘন করতে পারবেননা বেনজির। এর ব্যতয় ঘটালে কিংবা নির্ধারিত এলাকার বাইরে গেলে অথবা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে হলে তাকে আটক করতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। আর তখন জাতিসংঘের চুক্তির সুযোগ নিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত ব্যক্তিকে কৌশলে নিউইয়র্কের পাঠানোর সুযোগটি বাংলাদেশের জন্য বুমেরাং হতে পারে।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে প্রবেশকালে নিউ ইয়র্ক এয়ারপোর্টে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ ও স্টৃপ সার্চ (ন্যাংটো করে তল্লাশির) মুখে পরতে পারেন বেনজির। এর আগে ভারতীয় এক কূটনীতিক দেবযানী খোবড়াগাডেকে গ্রেফতার করে স্টৃপ সার্চ করা হয়েছিল। অন্যদিকে মার্কিন প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছ থেকে শত শত চিঠি মেইল গেছে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিডিউরিটির কাছে, যাতে করে কুখ্যাত এই মানবাধিকার হরণকারীকে যুক্তরাষ্ট্রে যেন ঢুকতে না দেয়া হয়। কেননা তিনি বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে মানবাধিকার হরণ করেছেন, মানুষ খুন করেছেন, গুম করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে এসেও তার বিরোধিতাকারী বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত আমেরিকান নাগরিকদের অনেকের ক্ষতিসাধন করতে পারেন। অন্যদিকে বহুগামী বেনজির বালোদেশের অনেক সিনেমা আর্টিস্ট, ছাত্রী, প্রতিকারপ্রার্থী, রাজনৈতিক নেত্রী, নারী পুলিশ কর্মকর্তা, এমনকি পতিতাদের শয্যাসঙ্গী করেছেন বেনজির। এই তালিকায় ইডেন কলেজের শারমিন, চিত্রনায়িকা কেয়া, বিদ্যা সিনহা মীম, পরীমনি, এক এডিশনাল এসপির স্ত্রী, লাস্যময়ী পুলিশ কর্মকর্তা সোনালী সেন সহ অনেকের নাম মিডিয়াতে ঘুরছে। ফলে সন্দেহ করা হয় তিনি এইডস বা এসটিডিতে ভুগতে পারেন, যা আমেরিকায় ছড়িয়ে দিতে পারেন, এমন তথ্য জানানো হয়েছে দেশটির প্রশাসনকে। এর পাশাপাশি তিনি তার পাচার করা মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের সম্পদ উদ্ধারে আমেরিকাতে লোক ভাড়া করে অনেকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটাতেও পারেন। তাই সম্ভাব্য ভুক্তভোগিরা প্রটেকশন চেয়ে দেশটির বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার কাছে আবদন করেছেন। ফলে বেনজিরের আমেরিকা অবস্থানকালে তার চলাফেরা, যোগাযোগ, এমনকি টেলিকথপোকথন, মেইল চালাচালির উপর গোয়েন্দা নজরদারীর আবেদন জানানো হয়েছে। গ্লোবাল ম্যাগনেটস্কি আইনে স্যাংশনে থাকায় বেনজির কার কার সাথে যোগাযোগ করে লেনদেন করে তাদের উপরেও ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের নজরদারী করা হতে পারে। ফলে যারাই তার কানেকশনে যাবেন, আটকে যেতে পারে তাদের সহায় সম্পদ।